কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ থেকে সুবল চন্দ্র দাস ঃ কিশোরগঞ্জে অবরোধ-হরতালে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাত হ”েছ পরিবহন ব্যবসা। লাগাতার অবরোধ-হরতালের কারণে পরিবহন ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। জেলার সঙ্গে সারাদেশের বাস যোগাযোগ বন্ধ থাকায় জেলাজুড়ে তিন সহস্রাধিক পরিবহন শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি পরিবহন মালিকরা ব্যাংক ঋণ ও কিস্তিতে গাড়ি কিনে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। প্রতিদিন তাদের লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হ”েছ। ব্যাংকের সুদ ও ঋণের টাকার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। সবমিলে পরিবহন ব্যবসা হুমকির মধ্যে পড়েছে। পরিবহন মালিকদের মধ্যে আন্দোলনের এমন কর্মসূচি নিয়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে অনন্যা, অনন্যা সুপার, যাতায়াত, অনন্যা ক্ল্যাসিকসহ বিভিন্ন পরিবহনের উন্নতমানের বাস রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে থাকে। হাওরের দ্বার হিসেবে পরিচিত চামড়াঘাট নৌবন্দর থেকে হাওর বিলাস, উজান-ভাটি, বত্রিশ বাস টার্মিনাল থেকে ঈশা খাঁ গেটলক এবং অন্যান্য উপজেলা থেকে প্রতিদিন প্রায় পাঁচশ’ বাস দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করে থাকে। কিš‘ লাগাতার অবরোধ-হরতালের কারণে ৯০ শতাংশ বাস চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। জেলা ও উপজেলা থেকে সব সার্ভিস বন্ধ থাকায় সারাজেলায় তিন সহস্রাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। দীর্ঘদিন বেকার থাকায় শ্রমিকদের একটি অংশ এখন চুরি-ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়েছে। শাহজাহান লস্করসহ একাধিক বাস মালিক জানান, শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ায় তাদের একটি অংশ পেটের দায়ে চুরি-ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছেন। ইতিমধ্যে টার্মিনালে রাখা কোনো কোনো গাড়ির স্পেয়ার পার্টস পাওয়া যা”েছ না। এগুলো চুরি হয়ে গেছে। মালিকদের ধারণা পেটের দায়ে ছোট ছোট স্পেয়ার পার্টস শ্রমিকরা বিক্রি করে দি”েছন। এভাবে চলতে থাকলে বাসের অধিকাংশ পার্টস চুরি হয়ে যাবে। তা ছাড়া কোনো কোনো বাস শ্রমিক ছোট ছোট ছিনতাইয়ে জড়িত হয়ে পড়ছেন। জেলা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ-সম্পাদক আলমগীর মুরাদ রেজা বলেন, লাগাতার হরতালে তাদের আড়াই হাজার শ্রমিক এখন বেকার। তাদের কোনো বিকল্প কর্ম সং¯’ানের সুযোগ না থাকায় পেটের দায়ে তারা এখন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। জেলা পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন মানিক বলেন, কিশোরগঞ্জে অধিকাংশ বাস ব্যাংক ঋণ ও কিস্তিতে কেনা। এভাবে চলতে থাকলে মালিকদের পথে বসতে হবে। এ ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি দেশের স্বার্থে প্রত্যাহার করা উচিত। আবু মিয়াসহ অনেক বাস শ্রমিক বলেন, সন্ধ্যার পর তাদের চাল-ডাল কিনে বাড়ি যেতে হয়। স্ত্রী-সন্তানরা চাল-ডালের অপেক্ষায় থাকে। কয়েকদিন ধার-কর্জ করে চলার পর এখন তাদের হাতে কোনো টাকা নেই। পেট ও ক্ষুধা ভালো-মন্দ বুঝে না। জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. কাঞ্চন মিয়া জানান, বর্তমানে তিন হাজার শ্রমিক বেকার। কয়দিন না খেয়ে থাকা যায়। বাধ্য হয়ে তারা অন্যায় কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যা”েছ।