ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি না নিয়ে ও বাহিনীর জ্যাকেট ছাড়া অভিযান চালানোর ঘটনায় চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এক উপপরিদর্শকসহ (এসআই) পাঁচজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এক ব্যবসায়ীর কার্যালয়ে গিয়ে ইয়াবা ও অস্ত্র রয়েছে বলে তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। বিষয়টি ওই কার্যালয়ের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
বরখাস্ত হওয়া ডিবি পুলিশের পাঁচ সদস্য হলেন এসআই আমিরুল ইসলাম, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জহিরুল ইসলাম, কনস্টেবল সোহেল মো. উমর, শাহ আলম ও গোলাম সামদানী। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল জলিল মণ্ডলের নির্দেশে ওই পাঁচজনকে সাময়িক বরখাস্ত করে দামপাড়া পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত সোমবার রাত ১১টার দিকে এনএ এন্টারপ্রাইজ নামের আবাসন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক সৈয়দ নাসিম আহমেদের পাঁচলাইশ এলাকার কার্যালয়ে অভিযানে যায় ডিবির একটি দল। তাদের সঙ্গে অস্ত্র থাকলেও গায়ে ‘ডিবি’ লেখা বাহিনীর জ্যাকেট ছিল না। ওই ব্যবসায়ীর কাছে ইয়াবা বড়ি ও অস্ত্র রয়েছে দাবি করেন অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া এএসআই জহিরুল। একপর্যায়ে ব্যবসায়ীর কার্যালয়ে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা দেখে চলে যান তাঁরা। তবে ব্যবসায়ী নাসিম আহমেদের দাবি, অভিযানের সময় তাঁর কার্যালয় থেকে তিন লাখ টাকা লুট করেছে ডিবি। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপকমিশনার কুসুম দেওয়ান গতকাল সন্ধ্যায় জানান, এক ব্যবসায়ীকে হয়রানির অভিযোগে ডিবির পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে অনুমতি ছাড়া এবং ডিবি লেখা জ্যাকেট না পরে অভিযান চালানোর কারণে একজন এসআইসহ পাঁচজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
কুসুম দেওয়ান জানান, ব্যবসায়ীর কার্যালয়ে এসআই আমিরুল ইসলাম না গেলেও তাঁর নির্দেশে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করায় তাঁকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে বরখাস্ত হওয়া পাঁচ ডিবি সদস্যদের বক্তব্য জানতে গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সবার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ব্যবসায়ী নাসিম আহমেদ গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে জানান, নারী নির্যাতনের একটি মামলায় বোনকে সহায়তা করছেন তিনি। এ কারণে প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁকে ফাঁসানোর জন্য পুলিশকে দিয়ে ওই কাজ করাতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি। কার্যালয়ে সিসি ক্যামেরা থাকায় ফাঁসানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তিনি জানান, অভিযান চালানোর সময় ডিবি পুলিশ সদস্যরা একটি ব্যাগ নিয়ে আসেন। ওই ব্যাগের ভেতরে মাদক ও অস্ত্র ছিল বলে তাঁর ধারণা। ঘটনার পরদিন এএসআই জহিরুল বিষয়টি পুলিশ বা অন্য কাউকে না জানাতে অনুরোধ করেন তাঁকে।