‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার দিশা’- জীবনানন্দ দাশের এই কবিতাটি পড়ে না জানি কত মেয়ে আফসোস করেছেন, ইশ! আমার যদি এমন ঘন কালো চুল হত। কিন্তু ঘন কালো চুল সবসময় রক্ষণাবেক্ষণ করাও খুব ঝামেলার এবং সময়সাপেক্ষ। চুলের একটি অন্যতম সমস্যা হচ্ছে চুল পড়া। কম বেশি আমাদের সবারই চুল পড়ে। ডাক্তারদের মতে দৈনিক ৭০-১০০ টা চুল পড়া স্বাভাবিক। চুল পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মাথায় নতুন চুলও গজায়। তবে যদি চুল যদি বেশি পরিমাণে পড়ে, অর্থাৎ চুল পড়ার হার যদি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয় তাহলে তা শঙ্কার কথা। কাজেই চুল বেশি পড়লে বিষয়টিতে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।
চুল পড়ার নানা ধরনের কারণ রয়েছে। আমরা যদি প্রথমেই কারণ বের করতে পারি তাহলে চুল পড়া রোধ করাটা সহজ হয়ে যায়। বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন কারনে চুল পড়তে পারে। চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো না হলে, অ্যানিমিয়া থাকলে, মানসিক স্ট্রেস-টেনশন, চুলে খুশকি, বড় কোন অসুখে ভুগলে, বেশি মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেলে ইত্যাদি নানা কারণেই চুল ঝরে পড়ে। অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন যেমন টেস্টোস্টেরন, অ্যান্ড্রোস্ট্রেনডিয়ন, ডিএইচটি হরমোনগুলো সাধারণত পুরুষের বেশি ও মহিলাদের কম পরিমাণে থাকে। এ হরমোনগুলো হেয়ার ফলিকলের ওপর কাজ করে ও চুল পড়া ত্বরান্বিত করে। সে কারণে পুরুষের চুল বেশি পড়ে। তবে সবারই যে পড়বে তা নয়, যাদের এসব হরমোনের প্রভাব বেশি তাদের বেশি করে চুল পড়ে। দুশ্চিন্তায় থাকলে স্বাভাবিকের চেয়ে তাড়াতাড়ি চুল পড়ে। তবে এ চুল পড়া সাময়িক এবং পুনরায় চুল গজায়।
চুল পড়া রোধে করণীয়:
● অতিরিক্ত চা বা কফি বর্জন করুন। কারণ চা বা কফিতে থাকে ক্যাফেইন যা আমাদের চুল এবং ত্বকের জন্য খুব ক্ষতিকারক।
● ধূমপান বর্জন করুন।এর কারনে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় এবং রক্তের নালিকাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
● স্বাস্থ্যকর খাবার বা প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার শুধু যে চুল শক্ত করে তা নয়, চুল গজাতেও সহায়তা করে। এছাড়া অতিরিক্ত চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবারও পরিহার করুন।
● নতুন চুল গজাতে উদ্দীপনা দেবার জন্য প্রতি সপ্তাহে চুলের ত্বক ম্যাসেজ করুন।
● চুল পড়া বন্ধ করতে ভিটামিন ই ক্যাপসুল খান অথবা ই ক্যাপ নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে হালকা গরম করে চুলে লাগান। ক্যাস্টর অয়েল তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যাবহার করতে পারেন।চুল পরা কমে যাবে।
● সপ্তাহে একদিন অন্তত ডিমের কুসুমের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে পুরো চুলে লাগান। এক ঘন্টা পর চুল শ্যাম্পু করে নিন।
● আমলকি ও জবাফুল নারকেল তেলে ফুটিয়ে বোতলে ভরে রাখুন। শ্যাম্পু করার আগে ওই তেলে চুলের গোড়ায় ম্যাসেজ করেন।
● তাজা নিম পাতা পানিতে ফুটিয়ে সিদ্ধ করে রস বের করুন। এরপর ঠাণ্ডা করে তা দিয়ে আপনার চুল এবং মাথার ত্বক ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার বা দুইবার এই প্রক্রিয়াটি অনুসরন করুন।
● লেবুর রসের সাথে চা পাতার নির্যাস মিশিয়ে তা দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং চুল ঝরে পড়া রোধ করবে।
● নিয়মিত ম্যাসাজ করতে হবে। এতে করে স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে এবং স্ক্যাল্প উদ্দীপিত হবে। এক টেবিল চামচ ভিটামিন ই নিয়ে মাথায় ম্যাসাজ করতে থাকুন। ভিটামিন ই চুলের জন্য প্রয়োজনীয় নিউট্রিশন এর যোগান দেয়।
এছাড়াও রয়েছে কয়েকটি ঘরোয়া পদ্ধতিঃ
কলার হেয়ার প্যাকঃ কলা যে চুলের জন্য খুবই কার্যকরী তা অনেকেরই জানা নেই। চুল পড়া বন্ধ করতে ও চুলের রুক্ষতা দূর করতে এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।মাঝারি সাইজের একটি পাকা কলা ভালো করে পেস্ট করুন।সাথে ২ চামচ মধু মেশান। এবার ভালো করে প্যাকটি চুলে ও মাথার ত্বকে লাগান। ৩০ মিনিট রাখার পর শ্যাম্পু করে নিন। এই প্যাকটি চুলের আগা ভাঙ্গা ও রুক্ষতা দূর করে। সপ্তাহে একদিন এই প্যাকটি ব্যবহার করুন। চুল সুন্দর ও মজবুত হবে।
রসুনের হেয়ার প্যাকঃএকটি বাটিতে নারকেল তেলের সাথে রসুন বাটা মেশান। মিশ্রণটি ভালো করে ফুটিয়ে নিন। এবার ঠাণ্ডা হলে মাথার ত্বকে ও সারা চুলে মিশ্রণটি লাগান। ৩০ মিনিট রেখে ভালো করে মাথা ধুয়ে নিন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি রাতে মেখে সকালে মাথা ধুয়ে নেওয়া যায়। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার করুন।
ডিমের হেয়ার প্যাকঃ একটা ডিম নিয়ে তাতে ২ চামচ মধু ও অল্প দই মিশিয়ে নিন ভালো করে। এরপর মিশ্রণটি চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে শুকনো পর্যন্ত। ৩০ মিনিট ধরে নিন শুকোতে সময় লাগবে।সপ্তাহে একবার করে করতে পারেন।
গ্রিন টিঃ এটি শুধু খাওয়ার জন্যই নয়, চুলের জন্যও অনেক উপকারি কারণ এতে প্রচুর এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। কুসুম গরম গ্রিন টি মাথার ত্বকে ১ ঘণ্টা লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ঔষধঃঅনেক গবেষণার পর ফেনাস্টেরাইড আর মিনোক্সিডিল নামের দুটো ওষুধ চুল গজানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। দুটি ওষুধের-ই সাইড ইফেক্ট আছে। মিনোক্সিডিল এর দুইটা কনসেনট্রেশন পাওয়া যায়। ২% আর ৫%। ২% মিনোক্সিডিল মেয়েদের জন্য আর ৫% মিনোক্সিডিল ছেলেদের জন্য। এটা বাজারে জেনোগ্রো নামে পাওয়া যায়। স্প্রে করে মাথার স্ক্যাল্পে দিতে হয়।
কথায় বলে যতনে রতন মেলে। নিয়মিত যত্ন নিন, পদ্ধতিগুলো মেনে চলুন।দেখবেন আপনারও হয়ে উঠেছে ঘন কালো চুল।