একজন সেরা করদাতার সঙ্গেও সরকারের সুসম্পর্ক নেই

দেশের একজন সেরা করদাতার সঙ্গেও সরকারের সুসম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক আফতাব–উল ইসলাম। তিনি বলেছেন, হয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), নয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অথবা আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সেরা করদাতাদের কোনো না কোনো বিরোধ আছে। এ দেশের আইনি ব্যবস্থা খুবই জটিল। তিনি প্রশ্ন করেছেন, এটা কেন হয়।

আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) আয়োজিত এক মধ্যাহ্নভোজসভায় আফতাব–উল ইসলাম এসব কথা বলেন। রাজধানীর গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে আয়োজিত ওই সভায় তিনি ব্যাংক খাত নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ভোজসভায় বক্তা ছিলেন সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ তারেক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এদেশীয় পরিচালক মনমোহন প্রকাশ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অ্যামচেমের সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি সালাউদ্দিন কাসেম খান, ফজলুল হক, আবদুল মোনেম ইকোনমিক জোনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম মাইনুদ্দিন মোনেম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

প্রশ্নোত্তরমূলক এ অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে ব্যাংক খাত নিয়ে কথা বলেন আফতাব–উল ইসলাম। তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ব্যাংকিং নীতি তৈরি করেন। সেটা ছিল ব্যাংক খাতের জন্য বাইবেল। ওই নীতিতে আর্থিক খাতের সর্বোচ্চ ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আমি দুঃখের সঙ্গে বলছি, এখন বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের অংশে পরিণত হয়েছে। যা কিছু আসে তা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আসে। সেটা হোক ঋণ পুনঃ তফসিল, অথবা অন্য কিছু।’

অ্যামচেমের সাবেক এই সভাপতি আরও বলেন, হাজার কোটি টাকা ঋণ না থাকলে তা এখন মর্যাদার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণের ব্যবস্থাপনা সরকারের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। ওই ঋণ চারবার-পাঁচবার পুনঃ তফসিল করা হয়। এ নির্দেশনা কখনো অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আসে। কখনো সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আসে। আসছে নির্বাচন সামনে রেখে খেলাপির খাতা থেকে নাম কাটাতে প্রচুর অর্থ ব্যাংকে আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে মনমোহন প্রকাশ স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন দিক উল্লেখ করেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬০-৭০ শতাংশ আসছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে। এটা একেবারেই একপক্ষীয় উন্নয়ন। এখন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম এবং উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে।

সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ তারেক বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতির এগিয়ে যাওয়ার গতি নির্ভর করবে দক্ষতা উন্নয়ন, রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ের ধারা এবং উৎপাদনশীলতা উন্নয়নে সরকার কতটুকু বিনিয়োগ করছে, তার ওপর।

অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের ইজ অব ডুয়িং বিজনেস বা সহজে ব্যবসা সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৭৬তম অবস্থান পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিডার চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, তাঁর সংস্থা এটা নিয়ে কাজ করছে। ভারত এ ক্ষেত্রে বেশ ভালো উন্নতি করেছে। বাংলাদেশও উন্নতি করবে।

 শফিউল ইসলাম বলেন, বেসরকারি খাতের উন্নতির জন্য নীতির ধারাবাহিকতা দরকার। কোনো একদিন সকালে যেন শুনতে না হয়, গ্যাসের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও দরকার। দেশে একটি স্বস্তিকর নির্বাচনী পরিবেশ বিরাজ করছে উল্লেখ করে তিনি রাজনীতিবিদদের এ জন্য ধন্যবাদ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *