দশম সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা হচ্ছেন কাজী ফিরোজ রশীদ। এরই মধ্যে তার নাম দলীয়ভাবে চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়া হবে। জাতীয় পার্টি ও সংসদ সচিবালয় থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এদিকে সংসদ সচিবালয় বিরোধী দলীয় উপনেতা হিসেবে কাজী ফিরোজ রশীদের নাম গেজেট করতে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এ প্রসঙ্গে ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী গতকাল মানবজমিনকে বলেন, বিষয়টি এখনও আমার কাছে আসেনি। নিয়মমাফিক এলে তখন চূড়ান্ত নাম জানা যাবে। এদিকে দলের শীর্ষ এক নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দলের বেশির ভাগ নীতিনির্ধারক কাজী ফিরোজ রশীদকে বিরোধী দলীয় উপনেতা পদের জন্য সমর্থন দিয়েছে। দলের চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতা বিষয়টি চূড়ান্ত করেছেন। দলের শীর্ষ ওই নেতা জানান, এতে প্রধানমন্ত্রীরও সমর্থন রয়েছে। এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, এটা একটি মর্যাদাসম্পন্ন পদ। শিগগিরই নাম ঘোষণা করা হবে। তবে বিষয়টি এখন পর্যন্ত প্রক্রিয়াধীন।
নির্বাচন বর্জন ও অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে গত ডিসেম্বর থেকেই মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন এরশাদ ও রওশন। নির্বাচনে অংশ নেবো নেবো করেও এরশাদ ৩রা ডিসেম্বর আকস্মিক তা বর্জনের ঘোষণা দেন। দল প্রধান নির্বাচন বর্জন করলেও রওশনের নেতৃত্বে দলটির ৮৫ প্রার্থী নির্বাচনে থেকে যান। ৩৪ আসন পেয়ে সংসদে বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হয় জাতীয় পার্টি। বিরোধী দলের নেতা হন রওশন। এরশাদ পরে নির্বাচন মেনে নিয়ে সংসদে শপথ নিলেও রওশনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব কমেনি। তবে দলীয় বিষয় নিয়ে সমপ্রতি দু’জনের মধ্যে বরফ কিছুটা গলেছে বলে জানান দলের নেতারা। বিশেষ করে বিরোধী দলীয় উপনেতা পদে কাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তা নিয়ে এরশাদ ও রওশনের মধ্যে অনেকটা প্রকাশ্য বিরোধ দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিতে সময় নেন দু’জনই। সংসদের দু’টি অধিবেশন শেষ হলেও তারা মতানৈক্যে পৌঁছতে পারেননি। অবশেষে তৃতীয় অধিবেশনে এসে কাজী ফিরোজ রশীদের বিষয়ে একমত হন তারা। দলের শীর্ষ এক নেতা জানান, বিরোধী দলীয় উপনেতা পদের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবশালী তৃতীয় এক রাজনৈতিক নেতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
১০ম জাতীয় সংসদের নির্বাচন কেন্দ্র করে এরশাদ-রওশন পরস্পরবিরোধী অবস্থান নেন। গত ১২ই জানুয়ারি দীর্ঘ এক মাস সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ‘চিকিৎসা’ গ্রহণ শেষে ফিরে রওশনবিরোধীদের দলে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন এরশাদ। .
এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ববি হাজ্জাজকে দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব দেন তিনি। এরশাদের বরাতে নির্বাচন বর্জনের কথা বলে গত ডিসেম্বরে আলোচিত-সমালোচিত হন ধনকুবের মুসা বিন শমসেরপুত্র ববি হাজ্জাজ। এক সময় জাতীয় পার্টির গবেষণা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করা ববিকে দলে ফিরিয়ে আনার তীব্র বিরোধিতা করেন রওশন। ৯ই জানুয়ারি জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের প্রথম সভাতেই রওশন বলেন, কে এই ববি হাজ্জাজ? তিনি বলেন, এমন ছেলে যেন আর দলে ঢুকতে না পারে। এরা যেন দলে থাকতে না পারে। রওশন ববি হাজ্জাজকে দলে ফিরিয়ে আনার বিরোধী হলেও গত ৩১শে জানুয়ারি দেশে ফিরেই এরশাদের আশীর্বাদে দলের মুখপাত্র ও নির্বাচন সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পেয়ে যান ববি। রওশনও চুপ থাকেননি। তিনিও আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যান। ৩১শে অক্টোবর দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশনের অতি ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত গোলাম মসিহকে অব্যাহতি দেন এরশাদ। পরে তিনি কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মহাসচিব হন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে চার দফা বৈঠক করে ২০ দলেও যোগ দেন গোলাম মসিহ। এরশাদকে খলনায়ক বেইমান আখ্যা দিয়ে বক্তব্য দেন। সেই গোলাম মসিহকে দলে ফিরিয়ে আনেন রওশন। সংসদে সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী তালিকা নিয়েও দু’জনের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে ওঠে।