সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম কিংবা অনলাইনে মানুষ যথাযথ সঙ্গীই খোঁজে। তাই নিজেকে তুলে ধরার সময় যাঁরা সফল, বিনয়ী ও সত্যনিষ্ঠ বৈশিষ্ট্যের পরিচয় দেন, তাঁদের জীবনসঙ্গী করার ব্যাপারে অন্যদের মধ্যে আগ্রহ বেশি দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এ তথ্য দিয়েছেন। তাঁদের মতে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে যাঁরা জীবনসঙ্গীর খোঁজ করেন, তাঁরা কারও চটকদার প্রোফাইলের পরিবর্তে বিশ্বাসযোগ্য উপস্থাপনাকেই বেশি গুরুত্ব দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির কমিউনিকেশনস স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক অ্যান্ডি হাই বলেন, ‘আমরা দেখেছি, যিনি অনলাইনে নিজের সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেন, অন্যরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। অসাধারণ বা আকর্ষণীয় কারও সঙ্গে দেখা করার ব্যাপারে মানুষ আকর্ষণ বোধ করলেও তিনি আসলেই আছেন কি না, তাঁর সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তোলার আগে অবশ্যই ভেবে দেখতে পছন্দ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ বছরের বেশি বয়সী প্রতি ১০ জনের একজন অনলাইনে বা মুঠোফোনে জীবনসঙ্গী খোঁজ করার মাধ্যমগুলোতে কোনো না কোনো সময়ে ঢুঁ মারেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার ২০১৩ সালে এ পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এক জরিপে দেখতে পান, ইতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে, এমন প্রোফাইলের লোকজন অনলাইনে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পান। অনলাইনের পাশাপাশি যাঁদের বাস্তব জগতেও খুঁজে পাওয়া যায়, তাঁরাই এগিয়ে থাকেন। এর মানে হলো, কেউ কারও সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার আগে তাঁর ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য চান। যেমন: তাঁর জীবিকা বা পেশা কী এবং আগ্রহের বিষয়বস্তুই বা কী কী ইত্যাদি। অ্যান্ডি হাই বলেন, কেবল ‘আমি লেখালেখি করি’—এটুকু জানানোর পরিবর্তে কেউ যদি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি কোথায় কী লেখেন, তাহলে যে কেউ তাঁর লেখা যাচাই করে নেওয়ার সুযোগ পান। এতে করে ব্যক্তি হিসেবে ওই লেখকের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। যদি আপনি কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, সেটির নাম জানিয়ে দিন। ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কারও ঠিকানা বা ওয়েবলিংক দেওয়াটা বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে সহায়ক হতে পারে। এসব স্পষ্টতার মাধ্যমে অজানা কারও কাছে নিজেকে বাস্তব জগতের একজন মানুষ বা আসল ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরতে পারেন।
ব্যক্তিগত প্রোফাইল যে কেবল জীবনসঙ্গী বাছাইয়ের জন্যই কাজে লাগে, তা নয়। অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ, পেশাগত অগ্রগতি ও ব্যবসায়িক সুযোগ লাভ করার জন্যও অনলাইনে নিজের প্রোফাইল তৈরি করেন। লিংকডইনের মতো অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমগুলো পেশাগত পর্যায়ে বেশ কাজে লাগে। ২০১৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত লিংকডইনে প্রোফাইল তৈরি করেছিল ৩৩ কোটি ২০ লাখ মানুষ। একাধিক গবেষণায় দেখা যায়, নিজেদের অর্জন ও সাফল্য সম্পর্কে অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়ে অনেকেই এসব প্রোফাইল তৈরি করেন। কেউ কেউ আবার অসত্য তথ্য দিয়ে অন্যের নজর কাড়ার চেষ্টা করেন।
ব্যক্তিগত এসব প্রোফাইলের মধ্য দিয়ে মানুষের স্বভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি যাচাই করার চেষ্টা চালান অ্যান্ডি হাই ও তাঁর সহযোগীরা। তাঁরা খোঁজ নেন, লোকজন সম্ভাব্য জীবনসঙ্গীর প্রোফাইলে কী দেখতে চান, কার সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে চান, কথা বলতে আগ্রহ বোধ করেন ইত্যাদি। এ জন্য তাঁরা আটটি প্রোফাইল তৈরি করেন (চারটি নারী পরিচয়ে ও চারটি পুরুষ পরিচয়ে)। কয়েকটি প্রোফাইলে একজন মানুষের জীবনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়। কয়েকটিতে কেবল সাফল্য ও ভালো ভালো কথা লিখে একজন মানুষকে অত্যন্ত আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা হয়। তারপর সেগুলোর প্রতি অন্যদের সাড়া দেওয়ার ধরন ও সংখ্যা বিবেচনায় নেওয়া হয়। এতে দেখা যায়, বাস্তবমুখী প্রোফাইলের প্রতিই সবাই বেশি আগ্রহ বোধ করেন ও আস্থা রাখেন।
গবেষকেরা বলছেন, আপনার সেরা বৈশিষ্ট্যগুলোই অন্যের কাছে তুলে ধরতে হবে।