ঈদের ছুটি কাটাতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রায় চার শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী দেশের বাইরে বেড়াতে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ ঈদের দুইদিন আগেই দেশ ছাড়বেন। উদ্দেশ্য বিদেশের মাটিতে পরিবার নিয়ে ঈদ করা। আবার কোনো কোনো কর্মকর্তা ঈদের দুই থেকে তিনদিন পর বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ঘুরে জানা গেছে, এবারের ঈদে কর্মকর্তারা সবচেয়ে বেশি যাচ্ছেন ভারত, ভুটান, নেপাল, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডসহ আরো কয়েকটি দেশে। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে কোনো কোনো কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও সেনজেনভুক্ত ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের বিদেশ যাত্রার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। ডাক্তারদের মধ্যে অনেকেই ভারতের ধর্মীয় স্থান আজমীর ও দর্শনীয় স্থান আগ্রাসহ আরো কয়েকটি স্থানে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। আবেদনে তারা বলেছেন, ঈদের ছুটিতে ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পরিদর্শনে যেতে চাই। এজন্য বহিঃ বাংলাদেশ ছুটির আবেদন করছি। গত কয়েক দিন এ সংক্রান্ত প্রায় ১৫ টি সরকারি আদেশ জারি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ডাক্তারদের ছুটি দেয় এমন একটি শাখায় বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা গেছে, ওই শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের চাপ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক এবং সহযোগী অধ্যাপকরা এবার ঈদের ছুটিতে সবচেয়ে বেশি দেশের বাইরে যাচ্ছেন। তারা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও নিজের খরচে বিদেশ নিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন করছেন। এ সপ্তাহেই সপ্তাহে বিদেশ যাত্রা সংক্রান্ত বেশির ভাগ সরকারি আদেশ জারি হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব, উপ- সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব ও সহকারী সচিব পদমর্যাদার শতাধিক কর্মকর্তা এবার ঈদের ছুটিতে বিদেশে যাচ্ছেন। বেশির ভাগ কর্মকর্তাই বহিঃ বাংলাদেশ ছুটি নিয়ে বিদেশে যাচ্ছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ঈদ এলেই কর্মকর্তারা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য উদগ্রীব থাকেন। এছাড়া ধর্মীয় ও দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করতেও অনেকে ছুটে যান। কয়েকটি শাখা থেকে বহিঃ বাংলাদেশ ছুটি প্রসেস করা হচ্ছে। সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ২৫ থেকে ৩০ জন প্রকৌশলী ঈদের ছুটিতে দেশের বাইরে থাকছেন। অনেকে ঈদের ছুটির পর পরই বিদেশ যাত্রার সরকারি আদেশ জারি করা হয়েছে। ঢাকা ওয়াসা’র একটি বড় গ্রুপ জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ইউরোপে যাওয়ার কথা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারাও ঈদের ছুটিতে দেশের বাইরে যাচ্ছেন। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন দেশ থেকে আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহ করে ছুটি নিচ্ছেন। বেশির ভাগ কর্মকর্তার ছুটির প্রক্রিয়া শেষে সরকারি আদেশ জারি করা হয়েছে। এরই মধ্যে অনেক কর্মকর্তা দেশের বাইরে গেছেন। কোনো কোনো কর্মকর্তা দেশের বাইরে গিয়ে ঈদের ছুটি কাটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, এ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক বা অধ্যাপকদের মধ্যে অর্ধ শতাধিক শিক্ষক ঈদের ছুটিতে বিদেশে যাচ্ছেন। বিদেশ ছুটি সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট শাখায় ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এসব ক্যাডার পদে কর্মকর্তাদের বাইরে পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, খাদ্য অধিদপ্তর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান ব্যুরো, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের (ডিসিসি) অর্ধ শতাধিক কর্মকর্তা ঈদের ছুটি দেশের বাইরে কাটাবেন। এসব দপ্তরেও সরকারি কর্মকর্তাদের অফিস ছুটির আদেশ জারি করা হয়েছে।