আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর জন্য বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলংকার তরুণদের রিক্রুট করাই তার কাজ। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে আইএস’র প্রধান সদস্য সংগ্রাহক (রিক্রুটার)। কিন্তু এখনও তিনি কর্তৃপক্ষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব মন্ত্রণালয়ের ‘বিশেষভাবে চিহ্নিত বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’দের (এসডিজিটি) হালনাগাদকৃত তালিকায় তার নাম এসেছে। ‘ছোটে মাওলা’, ‘অঞ্জন ভাই’ কিংবা ‘ইউসুফ আল-হিন্দি’ সহ বহু ছদ্মনাম তার। কিন্তু প্রকৃত নাম মোহাম্মদ শফি আরমার। তিনিই ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এসডিজিটি’তে অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রথম কোন সন্ত্রাসী।
ভারতের বার্তাসংস্থা পিটিআই’র এক খবরে বলা হয়, কর্নাটক অঙ্গরাজ্যের ভাটকলের বাসিন্দা আরমারের বিরুদ্ধে এখন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে। ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিশও ঝুলছে ৩০ বছর বয়সী এই সন্ত্রাসবাদীর বিরুদ্ধে।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘মোহাম্মদ শফি আরমার ভারতে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন (এফটিও) ও এসডিজিটি-ভুক্ত সন্ত্রাসী গ্রুপ আইএস’র একজন নেতা ও প্রধান সদস্য সংগ্রাহক।’
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘তিনি কয়েক ডজন আইএস সমর্থক নিয়ে একটি গ্রুপ তৈরি করেছেন। এই আইএস সমর্থকরা ভারতজুড়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। যেমন, হামলার ছক কষা, অস্ত্র কেনা ও সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ শিবিরের জন্য স্থান নির্ধারণ করা।’
পিটিআই’র খবরে বলা হয়, জঙ্গিগোষ্ঠী ইন্ডিয়ান মুজাহিদীন-এর ওপর ভারত সরকার অভিযান শুরু করলে বড় ভাইকে নিয়ে ভারত থেকে পাকিস্তানে চলে যাই আরমার। কিন্তু ইন্ডিয়ান মুজাহিদীনের প্রতিষ্ঠাতা সহ কয়েকজনের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে আরমার নিজেই আনসার উল তাওহিদ নামে একটি গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেন। পরে তার এই সংগঠন জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস’র কথিত ‘খেলাফতে’র প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। একাধিকবার খবর এসেছে যে, তিনি জোট বাহিনীর ড্রোন হামলা বা অভিযানে নিহত হয়েছেন। কিন্তু পরে সেসব খবরের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ আরমার ফেসবুক ও বিভিন্ন অনলাইন মেসেঞ্জার সেবা ব্যবহার করে ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার যুবকদের সঙ্গে যোগাযোগ ও তাদের ব্রেইনওয়াশ করে আসছিলেন। ২০১৩ সালে নেপাল সীমান্তে আটক হওয়া ইয়াসিন ভাটকালকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও আইএস’র সঙ্গে আরমারের সম্পৃক্ততার কথা জানা যায়।
ভারতের মধ্যপ্রদেশের রাতলামে সন্দেহভাজন আইএস সমর্থকদের বিরুদ্ধে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) তদন্ত শুরু করলে প্রথমবারের মতো আরমারের নাম উঠে আসে। পরে বহু আইএস সমর্থককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে জানা যায়, আরমার ভারতের মুসলিম যুবকদের উগ্রপন্থায় দীক্ষিত করার চেষ্টা করছে অনেক দিন ধরে। অনলাইনে জুন্দ উল খলিফা-এ হিন্দ নামে একটি সংগঠনের জন্যও সদস্য সংগ্রহ করছিলেন তিনি।
রাজধানী দিল্লী সহ বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলার ছক কষার অভিযোগে এনআইএ তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে।