বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন বন্ধ থাকায় সারা দেশে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো ২৪ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত ফিলিং স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন বন্ধ থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কর্তৃপক্ষ। ফিলিং স্টেশন বন্ধ থাকায় গাড়িতে গ্যাস না নিতে পেরে দুর্ভোগে পড়েছেন অনেকে। তড়িঘড়ি করে গত মঙ্গলবার রাতেই গাড়িতে গ্যাস ভরেছেন অনেকে। গ্যাস না থাকায় রাজধানীতে গণপরিবহনের সংকট দেখা দেয়।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে শুরু হওয়া বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত চলে। এসময় উৎপাদন বন্ধ থাকায় তিতাস গ্যাসের আওতাধীন সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। এই সময়ে বাসাবাড়িতে সীমিত আকারে গ্যাস সরবরাহ করা হয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। এর আগে ২০১৫ সালে একই কারণে ঈদের দিন রাত ১২টা থেকে ২৪ ঘণ্টা ফিলিং স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ ছিল। এদিকে ভুক্তভোগী অনেকেই বলেছেন, ২৭শে জুন রাত থেকে গ্যাস বন্ধ থাকবে এমন খবর তারা আগে শোনেননি। ফলে ঈদের ছুটির পর অফিস খোলার প্রথম দিনই সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাদের। অনেকে ঢাকায় ফিরে গণপরিবহন সংকটে চলাফেরা করতে সমস্যা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর বলেন, ঈদের আগে-পরে ১০ দিন ২৪ ঘণ্টা সিএনজি ফিলিং স্টেশন খোলা রাখার সরকারি সিদ্ধান্ত ছিল। তার সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত সাংঘর্ষিক। ঈদে বাড়ি যাওয়া এবং বাড়ি থেকে ফেরার সুবিধার জন্য সরকার ২৪ ঘণ্টা পাম্প খোলা রাখার অনুমতি দিলো। আবার এই সময়ের মধ্যেই সারা দেশে পাম্প বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কারণে মানুষের অনেক দুর্ভোগ হয়েছে। গাড়িতে ২৪ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে রাস্তায় নেমে বিপত্তিতে পড়তে হয়েছে মানুষকে। ছুটির পর এই সময়ে ঢাকার রাস্তায় গণপরিবহনের সংখ্যা এমনিতেই কম থাকে। তার মধ্যে গ্যাসের অভাবে বুধবার সকাল থেকে অটোরিকশার সংখ্যাও কম দেখা গেছে। আগের রাতে গ্যাস নিতে পারায় সকালে যারা অটোরিকশা নিয়ে বেরিয়েছেন, তারাও বেশি ভাড়া হাঁকিয়েছেন। ফলে লম্বা দূরত্বের যাত্রীদের পকেট থেকে বেশি টাকা গুনতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফেরদৌস রহমান বলেন, উত্তরা হাউস বিল্ডিং এলাকা থেকে নীলক্ষেত যাওয়ার জন্য তাকে ১০০ টাকা বেশি ভাড়া দিতে হয়েছে। বেশি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে অটোরিকশা চালক বলেন, দিনে ?দুই থেকে তিনবার গ্যাস নেয়া লাগে। গত মঙ্গলবার থেকে গ্যাস বন্ধ। রাত্রে যারা গ্যাস ভরতে পেরেছে, তারাই আজকে (গতকাল) রাস্তায় বের হয়েছে। গাড়ি কম, তাই ভাড়াও বেশি।
গ্যাসের সমস্যা সাময়িক : বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেছেন, বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য সিএনজি স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকা সাময়িক। এর জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বেশ আগে থেকেই জানিয়ে আসছি (সার্ভিসিংয়ের জন্য) সিএনজি স্টেশন বন্ধ থাকবে। বিবিয়ানায় আমাদের যে গ্যাসক্ষেত্র আছে ওখানে ওরা সার্ভিসিংয়ে যাবে। বিষয়টা আমরা পত্রিকায় ও টেলিভিশনেও দিয়েছি। এটা বেশিক্ষণ নয়, ২৪ ঘণ্টার জন্য। গত রাত ১২টা থেকে শুরু হয়েছে, আজ রাত ১২টা পর্যন্ত থাকবে। তিনি বলেন, এটা খুব সাময়িক। হয়তো সিএনজি পাম্পগুলো গ্যাস দিতে পারবে না। যারা সিএনজি গাড়ি ব্যবহার করেন তারা তো পেট্রলও ব্যবহার করেন। তারা তেল নিয়ে চলতে পারবেন। নসরুল হামিদ বলেন, আমাদের বড় চিন্তা ছিল পাওয়ার প্লান্টের জন্য। আমি দেখছি পাওয়ারে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কারণ এখন যে অবস্থায় আছে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ এমএমসি এফটি কমে গেছে, আমরা স্ট্যাবল আছি। আমরা সব জায়গায় পাওয়ার দিতে পারছি। কারণ আমাদের হাতে কিছু রিজার্ভ ছিল, সেটা দিয়ে আমরা মোটামুটি কাভার করতে পারছি। তবে বিদ্যুতের ক্ষেত্রে একটি ভালো অবস্থায় যেতে ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেতে আরো দু’তিন বছর সময় লাগবে।