জাপানের দুর্ধর্ষ গ্যাংগ্রুপ ইয়াকুজা। এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তারা করে না। এমন কি গ্রুপের সদস্যদের হাতে তাদের মেয়ে অথবা স্ত্রীকে তুলে দেয়। তাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়তে বাধ্য করে। এ সম্প্রদায়ের সদস্যদের গায়ে অনেক সময়ই দেখা যায় ট্যাট্টু বা উল্কি। কখনো আবার দেখা যায় তাদের হাতের কনিষ্ঠ আঙুল নেই। অথবা তা কেটে ফেলা হয়েছে। তারা ব্লাকমার্কেটে বিক্রি করে কিডনি, যকৃৎ। সাধারণ্যের মধ্যে তারা ঘুরে বেড়ায়।আর সুযোগ মতো টোপ ফেলে ধরে নেয় শিকার। এ গ্রুপের সদস্যদেরকে প্রথমেই প্রশিক্ষণ নিতে হয়। তারা তরবারি নিয়ে লড়াই করা এবং মেডিটেশন শিক্ষা নেয়। যদি কেউ এ সময়ে লাইনের বাইরে পড়ে যায় তাহলে তার শাস্তি হিসেবে কনিষ্ঠ আঙুল কেটে দেয়া হয়। তারা জুয়াড় অর্থ পরিশোধে করতে ব্যর্থ হলে, হত্যা অথবা মাদক আমদানির মতো কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলেও তাদেরকে এ শাস্তি দেয়া হয়। এ প্রক্রিয়াটির নাম ইউবিটসুমি। এর অর্থ হলো একটি আঙুল কমিয়ে দেয়া বা তা কেটে খাটো করে দেয়া। অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে এই ধারা চলে আসছে। ওই সময় থেকেই জাপানি কেন্দো নামের তরবারি ধরতে ওই কনিষ্ঠ আঙুল হলো গুরুত্বপূর্ণ। এই আঙুলটি না থাকলে এই তরবারি নিয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে যোদ্ধা হয়ে পড়ে দুর্বল। তাদেরকে ভর করতে হয় দলনেতার ওপর। কিন্তু বর্তমানে এই রীতিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজেই নিজের আঙুল কেটে ফেলেন। তারপর তা নিয়ে তার বসের কাছে উপঢৌকন হিসেবে উপস্থাপন করে। যদি গ্যাংয়ের কোনো সদস্য তাদের বসের সঙ্গে অব্যাহতভাবে অপরাধ করতেই থাকে তাহলে তার আরো আঙুল কেটে ফেলা হয়। এটাই হলো সবচেয়ে কড়া শাস্তি। যাদেরকে সরিয়ে দেয়া হয় তারা আর বাকি জীবন ওই গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না।
আগে ইয়াকুজা গ্রুপের সদস্য ছিলেন। এখন সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছেন অনেকে। তারা সমাজে মেশার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ওই গ্যাংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে তারা কাজ খুঁজে পাচ্ছেন না। এ জন্য কেউ যাতে বুঝতে না পারেন সে জন্য তারা কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা আঙুল ব্যবহার করেন। যাতে কেউ তাদেরকে ইয়াকুজা গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে চিনতে না পারে। তবে এমন আঙুল লাগানোর জন্য তাদের খরচ পড়ে ১৫০০ পাউন্ড।
আঙুল কেটে দিলে তাতে গ্যাংয়ের সদস্যদের সহজেই পুলিশ চিনে ফেলে। এ জন্য সাম্প্রতিক সময়ে এই রীতি অনেক স্থানে বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবর্তে তারা নতুন নতুন উপায় খুঁজে নিয়েছে। তারা ব্যবহার করে ‘হোয়াইট কলার’ ইমেজ। তাদের থাকে অফিস। নিবন্ধিত সদস্য। বিজনেস কার্ড। প্রেস কনফারেন্স করে। ২০১১ সালের ভূমিকম্পে এবং সুনামি আক্রান্তদের ত্রাণ দেয়ার জন্য কখনো কখনো তাদের প্রশংসা করা হয়। তারা টোকিও এবং কোবে অঞ্চল থেকে খাদ্য, পানি, কম্বল, প্রসাধন সামগ্রিবোঝাই ট্রাক পাঠায় উত্তর-পূর্ব জাপানে। জাপান কর্তৃপক্ষ দুর্গতদের সেবায় সাড়া দেয়ার আগে অনেক ক্ষেত্রে তারা এটা করে থাকে। সাবেক একজন ইয়াকুজা বসের ছেলে মানাবু মিয়াজাকি। তিনি লেখকও। বলেছেন, ইয়াকুজারা সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ। তারা অনেক দুর্ভোগ ভোগ করেছে। তাই এখন তারা বিপদে পড়া মানুষদের সহায়তা করার চেষ্টা করছে।
জাপানে ইয়াকুজা গ্যাংয়ের সদস্য হওয়ার সঙ্গে ট্যাট্টু বা উলকি আাঁকা একটি প্রথা। এ গ্রুপের রয়েছে ৩৫০০০ সুসংগঠিত অপরাধ বিষয়ক সিন্ডিকেট। তাদেরকে নিয়ে বিশ্ব বিস্মিত। কারণ তারা মাদক, আগ্নেয়াস্ত্র, মানব দেহের অঙ্গ ও যৌনতায় নারী পাচারের মতো অবৈধ ব্যবসায় জড়িত। তাদের সবচেয়ে কুখ্যাত নেতা কাজুও তাওকা। তার ডাক নাম ‘দ্য বিয়ার’ বা ভল্লুক। তাকে একবার হত্যা করার জন্য কাঁধে গুলি করা হয়েছিল। তাতে বেঁচে গেছেন তিনি। তার ওপর যে হামলা করেছিল কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কোবের কাছে এক জঙ্গলে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এ জন্য কাজুও তাওকাকে ভল্লুক বলে আখ্যায়িত করা হয়।