জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা, ২০১৪’ এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।
সোমবার সকালে রিট আবেদনটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনূছ আলী আকন্দ।
স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠনের বিধান রেখে ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা, ২০১৪’ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
৪ আগস্ট সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নীতিমালার অনুমোদন দেওয়া হয়।
রিটে এ নীতিমালা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- সে মর্মে রুল চাওয়া জারি আর্জি জানানো হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও তথ্য সচিবকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদের সম্মেলন কক্ষে সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা বলেছিলেন, কাজের ক্ষেত্রে এ কমিশন হবে স্বাধীন। সম্প্রচার নীতিমালা পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠন করা হবে। পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে আইন করার কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়।
স্বাধীন এ কমিশন সম্প্রচার নীতিমালা বাস্তবায়নে কোড অব গাইডেন্স গঠন করবে। নীতিমালা অনুযায়ী লাইসেন্স দেওয়ার সুপারিশও করবে কমিশন।
সার্চ কমিটির মাধ্যমে সম্প্রচার কমিশনের চেয়ারম্যান বা প্রধান নির্ধারণ করা হবে। সাংবাদিক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ের শিক্ষক, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে এ কমিশন গঠিত হবে।
সম্প্রচার নীতিমালা ও কমিশনের জারি করা নিয়মাবলি যথাযথভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে কি না, তা পরিবীক্ষণ করবে এ কমিশন। সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের কোনো অনুষ্ঠান, সংবাদ বা বিজ্ঞাপন যাতে কোনো নাগরিকের ব্যক্তিগত ক্ষতির কারণ না হয় সে বিষয়টি মনিটরিং করবে কমিশন।
নীতিমালায় রয়েছে, সশস্ত্র বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি কটাক্ষ করা যাবে না এবং সশস্ত্র বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত কোনো বাহিনীর প্রতি কটাক্ষ করা বা অবমাননাকর দৃশ্য বা বক্তব্য প্রচার করা যাবে না। অপরাধীদের দণ্ড দিতে পারেন এমন সরকারি কর্মকর্তাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার মতো দৃশ্য বা বক্তব্যও প্রচার করা যাবে না। জনস্বার্থ বিঘ্নিত হতে পারে এমন কোনো বিদ্রোহ, নৈরাজ্য, হিংসাত্মক ও বিদ্বেষমূলক ঘটনা প্রচার করা যাবে না।
নীতিমালায় বলা হয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা, ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে সংবাদ ও অনুষ্ঠান প্রচার করতে হবে। সম্প্রচারে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আদর্শ ও সামাজিক মূল্যবোধ নীতিমালায় সমুন্নত রাখতে বলা হয়েছে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এমন সামরিক, বেসামরিক বা সরকারি তথ্য প্রচার করা যাবে না।
নীতিমালার আলোকে সম্প্রচার কমিশন এবং এ সম্পর্কিত আইন করা হবে। তবে কমিশন ও আইন না হওয়া পর্যন্ত সম্প্রচার সম্পর্কিত নীতিমালা বাস্তবায়নে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। কমিশন গঠনের পর আইনের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে কাজ করবে। ঘটনা তদন্ত করে সুপারিশ করা ও আইন করে শাস্তির বিধান করা হবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
নীতিমালা অনুযায়ী, টক-শো অনুষ্ঠানে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য-উপাত্ত পরিহার করতে হবে।
নীতিমালায় এ বিষয়ে আরও বলা হয়, বেতার ও টেলিভিশনসহ সম্প্রচার মাধ্যমকে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের ভাষণসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান যথাযথভাবে প্রচার করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি সব প্রচার মাধ্যমই এই নীতিমালা মেনে চলবে।
বিজ্ঞাপন প্রচার
পণ্য ও ভোক্তার অধিকার রক্ষা করে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হবে। নারীর অধিকার রক্ষা করতে হবে বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে।
সরাসরি বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশবিরোধী বা জনস্বার্থবিরোধী বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে।
যা প্রচার করা যাবে না
জাতীয় আদর্শের প্রতি বিদ্রুপ করে কোনো সংবাদ বা অনুষ্ঠান প্রচার করা যাবে না। বিচ্ছিন্নতা ও অসন্তোষ সৃষ্টি, ব্যক্তির প্রাইভেসি, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন বিষয়ে সংবাদ বা অনুষ্ঠান প্রচার করা যাবে না।
কোনো জনগোষ্ঠীর মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন সংবাদ ও অনুষ্ঠান প্রচার করা যাবে না। দুর্নীতির প্রতি সহানুভূতির সৃষ্টি হয় এমন সংবাদ বা অনুষ্ঠান প্রচার করা যাবে না। বিদেশি রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর কোনো সংবাদ প্রকাশ করা যাবে না বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
অনুসরণীয় মানদণ্ড
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, ভাষা-সংস্কৃতি মূল্যবোধ সমুন্নত রাখা, জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্ট, স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ, শহীদ দিবস ২১ ফেব্রুয়ারিসহ জাতীয় দিবসের সংবাদ ও অনুষ্ঠান প্রচার করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সব সম্প্রচার মাধ্যমের জন্য এই নীতিমালা অনুসরণীয় হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সাতটি অধ্যায়ে এ নীতিমালা প্রস্তুত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে স্বাধীন ও অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করতে এ সম্প্রচার নীতিমালা শক্তিশালী ও সুন্দর হয়েছে।