খুলনা টেস্টে বাংলাদেশ দেখল এক অন্য তামিমকে। ধীরস্থির, প্রত্যয়দীপ্ত! বড় একটা ইনিংস খেলার অদম্য ক্ষুধা সঙ্গী করে খুলনায় খেলতে নামা তাঁর। সেই ক্ষুধা যে জিম্বাবুইয়ানদের এভাবে নাকাল করবে, সেটা আর কয়জন ভেবেছিলেন! টেস্ট ক্রিকেটে শেষ সেঞ্চুরিটি যাঁর চার বছর আগে, সেই তামিম দারুণ এক শতরানে নাচিয়ে দিলেন শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামের গ্যালারি। নাচিয়ে দিলেন গোটা বাংলাদেশকে।
খুলনায় তামিমের সেঞ্চুরিটি রানের হিসেবে বিচার করাটা ঠিক হবে না। টেস্টের প্রথম দিনেই ২৫০ বল খেলে ৭৪ রানে অপরাজিত তামিম আজ দ্বিতীয় দিনে মাইলফলকটি ছুঁয়েছেন কেবল। এই মাইলফলক ছুঁতে তাঁর খেলা ৩৩২ বলের সংগ্রাম কিন্তু ছুঁয়ে গেছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। তামিমের এই ইনিংস কেবল তিন অঙ্কের গৌরবই নয়, দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণের দারুণ এক অনুষঙ্গও। টেস্ট ক্রিকেটে ১৪ বছর পার করে ফেলার পরেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে এমন ইনিংসের তৃপ্তি থেকে দেশবাসী যে বঞ্চিত হচ্ছিলেন নিরন্তর।
তামিমের সর্বশেষ সেঞ্চুরিটি এসেছিল ২০১০ সালের জুনে। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৮ রানের আগে অবশ্য তামিম লর্ডস মাতিয়েছিলেন ১০৩ রানের ইনিংসে। গত চার বছরে খেলেছেন আরও ৩৪টি টেস্ট ইনিংস। এতে ৯টি ফিফটি এলেও সেঞ্চুরিটা ধরা দিচ্ছিল না কিছুতেই। এ নিয়ে কত অভিযোগ, কত লেখালেখি! তামিম নিজেও ব্যাপারটি নিয়ে যে উদ্বেগাকুল সময় কাটিয়েছেন, সেটা তাঁর শরীরী ভাষায় উঠে এসেছে বারবারই।
খুলনা টেস্টের আগে বেশ বাজে সময়ই কাটাচ্ছিলেন। মিরপুরে দুটো ইনিংসে ৫ আর শূন্য সমালোচনামুখর করে তুলেছিল অনেককেই। সময়টা খারাপ যাচ্ছিল বলেই হয়তো সমর্থকদের বিস্মৃতিপ্রবণ মস্তিষ্ক ভুলিয়ে দিয়েছিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টানা তিন ইনিংসে ৫৩, ৪৮ ও ৬৪ করেছিলেন।
তামিমের জবাবটা হলো রাজসিক ভঙ্গিতেই, তাঁকে নিয়ে সব সংশয়কে মিথ্যে প্রমাণ করেই। যদিও বাংলাদেশের সবচেয়ে মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি যাঁর, সেই তিনিই আজ ভেঙে দিলেন বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে ধীরগতির সেঞ্চুরির রেকর্ড। যে রেকর্ডটা এক সময় তাঁর ভাই নাফিস ইকবালের ছিল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ৩০৯ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন নাফিস। যে সেঞ্চুরি বাংলাদেশকে প্রথম টেস্ট সিরিজ জেতাতে রেখেছিল বড় ভূমিকা। তামিমের লাগল ৩১২ বল।
দুই ইকবাল ভাইয়ের পরে বাংলাদেশের পক্ষে ধীরগতির সেঞ্চুরির তালিকায় আছেন জাভেদ ওমর (২৯৪ বল) ও আমিনুল ইসলাম (২৮২ বল)। এমন অবশ্য নয়, একদম হুট করে তামিম বদলে গেছেন। মারকুটে মেজাজে খেলার ঝুঁকি তো থাকেই। সফল হলে হাততালি আর ব্যর্থ হলে সমালোচনা। সেই সমালোচনার জেরেই কিনা তামিম খেলার ধরন পাল্টাচ্ছিলেন। এই ইনিংসে যেমন ৪৭৩ মিনিট ব্যাট করেছেন, মিনিটের হিসাবে যেটি বাংলাদেশের পক্ষে চতুর্থ দীর্ঘতম ইনিংস (৫৩৫ মিনিট ব্যাট করে এই রেকর্ডে সবার ওপরে আমিনুল)।
মারকুটে তামিম নাকি সুস্থির তামিম—কোনটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য বেশি দরকার, এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই, ধৈর্যের প্রতিমূর্তি হয়ে ওঠা তামিম তাঁর পঞ্চম সেঞ্চুরিটির জন্য একটা বড়সড় অভিনন্দন পেতেই পারেন এখন।