ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতাদের অন্যতম চঞ্চল চৌধুরী। এরপর পাশাপাশি অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রেও। আর এজন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তিনি শুধু নাটক ও চলচ্চিত্রে নয়। বিজ্ঞাপনচিত্রের বিভিন্ন চরিত্রেও অভিনয় করে দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। সম্প্রতি শেষ করেছেন ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রের শুটিং। এখন চলছে ছবিটির সম্পাদনার কাজ। বর্তমানে খণ্ড নাটকে অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারকা অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী নাটকের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন-
সাম্প্রতিক সময়ে নাটকের মান ও দর্শকপ্রিয়তা নিয়ে বেশ সমালোচনা চলছে, আবার অনেকে এও বলছেন একটা সময় দর্শকদের কাছে নাটকের যে আবেদন সে বিষয়টা আর আগেরমত অবস্থায় নেই, বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?
চঞ্চল চৌধুরী: বর্তমানে ভালো নাটকের সংখ্যা কমে গেছে। তবে ভালো নাটক হলে দর্শক এখনও দেখেন। কিন্তু সেখানে বাঁধা সৃষ্টি করে অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন প্রচার। আর মানসম্পন্ন নাটক নির্মাণ না হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে-এরমধ্যে ভালো চিত্রনাট্যের বেশ অভাব, বাজেটের দৈনত্য রয়েছে, দক্ষ শিল্পী, দক্ষ পরিচালকের সংখ্যা কমে গেছে। এখন তাড়াহুড়ো করে নাটক নির্মাণ হচ্ছে। সিরিয়ালে প্রতিদিন ২৫-৩০টি সিকোয়েন্স সম্পন্ন করতে হচ্ছে। এজন্য মানসম্পন্ন কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে একটি বিষয় আমাদের দেশের দর্শকরা আমাদের নাটক বাদ দিয়ে অন্যদেশের নাটক দেখেন- কিন্তু আমার কাছে মনে হয় তাদের দেশের নাটক সেরকম মানসম্পন্ন নয়। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত করে বলতে পারি আমরা যে নাটকগুলোতে অভিনয় করছি তাতে আলাদা এক শ্রেণীর দর্শক রয়েছেন।
আর একটি বিষয় বেশির ভাগ পরিচালক বলছেন বাজেট সংঙ্কটের কারণে ভালো নাটকত নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না, আপনি কি বিষয়টির সঙ্গে একমত কিনা?
চঞ্চল চৌধুরী: একটা বিষয় বলি খুব বেশি ভালো পরিচালকরা এখন সেভাবে কাজ করছেন না। কারণ তারা একটি নাটক নির্মাণের জন্য যে পরিমান বাজেট দরকার তা তারা পাচ্ছেন না। এজন্য তারা ঈদ কেন্দ্রীক বা বিশেষ দিবসে সিরিয়াল নির্মাণ করছেন। কিন্তু তারা যে শর্তচ্যানেলকে দেবেন তা তারা মেনে নিবেন না। বেশিরভাগ চ্যানেল নাটক বানানোর জন্য যে পরিমানে বাজেট দেন তা দিয়ে আসলে নাটক নির্মাণ করা সম্ভব নয়। একটা সময় দর্শক যেসব পরিচালকদের নাটক দেখার জন্য টিভির সামনে বসে অপেক্ষা করতেন, তা এখন আর নেই বললেই চলে।
তাহলে নাটকের নামে হচ্ছেটা কি?
চঞ্চল চৌধুরী: এখন নাটকের নামে যা হচ্ছে সেগুলো নাটক নয়। নাটক এখন আর নাটকের লোকের হাতে নাই। এরমধ্যে পেশাদার লোকের সংখ্যা কম আছে। এরা বিভিন্ন পেশায় চলে গেছে। আর এখনকার প্রযোজকরা পেশাদার প্রযোজক না। হুট করেই এসে প্রযোজনা করছেন। আবার এভাবেই চলে যাচ্ছেন। নাটকের ভেতরে নাটকের মানুষ নয় এমন মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে। আর এর কারণেই আজ নাটকের এ অবস্থা।
তবে একটি বিষয় গত ঈদে বিজ্ঞাপনহীন নাটক দেখানো হয়েছে বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?
চঞ্চল চৌধুরী: এ বিষয়টি নি:সন্দেহে ভালো একটি উদ্যোগ। দর্শক যাতে নাটকটি দেখতে পারেন। রিমোট ঘুরিয়ে অন্য চ্যানেলে চলে না যান। এটা প্রশংসার দাবি রাখে। বিজ্ঞাপন যখনই দেন না কেন? নাটক যখন শুরু করেন, অন্তত নাটকটি একবারেই শেষ হয়ে যায়। একটা সময় বিষয়টি সহনীয় ছিল। দর্শককে ধরে রাখতে হলে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
আপনাদের পরবর্তী সময়ে যারা অভিনয়ে এসেছেন, তাদের মধ্য থেকে সেভাবে কোন বড় মাপের তারকা অভিনেতা বা অভিনেত্রী বের হয়ে আসতে পারেন নি, কেনো?
চঞ্চল চৌধুরী: হ্যাঁ এটা আসলে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এখন নতুন যারা অভিনয় করতে আসছেন তাদের লক্ষ্যটা স্থীর নয়। তারা আসলে কি হতে চায়? এ নিয়েই তারা দোটানার মধ্যে রয়েছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা তারকা হতে চান। কিন্তু তারকা হওয়ার জন্য অভিনয় দক্ষতা বা পর্দায় নিজেকে তুলে ধরা, সে বিষয়ে আর সেভাবে তারা মনোযাগ দিতে পারছেন না। আমরা যখন শুরু করেছিলাম তখন কাজটা ছিল প্রথম অগ্রাধিকার। এরপর ভালো কিছু কাজ করার কারণে দর্শক আমাদেরকে গ্রহণ করেছে। নতুন যারা অভিনয়ে আসছে তাদের বেশিরভাগের কাজের প্রতি মনোযোগটা কম। আর কাজটা তারা শিখে আসছে না। আমরা দীর্ঘ একটা সময় মঞ্চে অভিনয় করেছি। এছাড়া সিনিয়র শিল্পীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শুনেছি। এখন মেয়েদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তিন মাসের একটি গ্রুমিংয়ের মাধ্যমে তারা অভিনয়ের খাতায় নাম লেখাচ্ছেন। আবার এরাই কোন কোন ছবির নায়িকা হিসেবে অভিনয় করছেন।
এছাড়া আপনি নতুন কোন ছবিতে অভিনয় করছেন কিনা?
চঞ্চল চৌধুরী: না। অমিতাভ রেজার ‘আয়নাবাজি’ ছবির ডাবিং চলছে। আর আমিতো ঐ ভাবে ছবিতে অভিনয় করিনা। একটা ছবি করি সেটার গল্প, ভালো পরিচালকসহ আনুসাঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করেই কাজটি করি।
অভিনয়ে বর্তমমান ব্যস্ততা-
চঞ্চল চৌধুরী: বর্তমানে গোলাম সরোয়ার দোদুলের ‘কমেডি অ্যাট কলোনি’, হিমেল আশরাফের ‘একদিন ছুটি হবে’, সাজ্জাদ সুমনের ‘নন স্টপ’। এছাড়া আরও কয়েকটি নাটকে অভিনয় করছি।