রাফিঃ সেই অন্ধ রিকশাচালক মনিরের ভাগ্য বদলাচ্ছে! সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সহযোগিতার আশ্বাস পেয়ে বন্ধ করে দেন রিকশা চালানো। জানা যায়, ফেনী সদর উপজেলার নির্বার্হ কর্মকর্তা পিকেএম এনামুল করিম অন্ধ মনির হোসেনকে রিকশা চালাতে নিষেধ করেছেন।যার ফলে তিনি এখন বেকার সময় পার করছেন।এসব কথা জানালেন মনির হোসেন। ফেনী সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা পিকেএম এনামুল করিম জানিয়েছেন, মনির একদম গরিব। যে রিকশাটি চালায় তাও ভাড়া করা। তাকে সহযোগিতা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি আবেদন পাঠানো হয়েছে। খুব সহসাই তার জন্য একটি বরাদ্দ আসার প্রক্রিয়া চলছে। তার ৮ বছর বয়সী মেয়ে ফারিয়াকে স্কুলে যেতে বলা হয়েছে। জানা যায়, জন্মান্ধ রিকশাচালক বাবার চোখের আলো তার ৮ বছর বয়সি মেয়ে ফারিয়া। জীবিকার তাগিদে বাবা ঘুরাতেন রিকশার হ্যান্ডেল ধরে আর পথ দেখাতেন মেয়ে।এভাবে করে প্রতিদিন খাবারের টাকা জোগাড় করতেন তিনি। অন্ধ মানে ভিক্ষাবৃত্তি নয়, তারই বিরল দৃষ্টান্ত ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়নের সুন্দরপুর গ্রামের মনির হোসেন (৪৫)। যে কী-না নিজে হাঁটতে অন্যের সহযোগিতা নিতে হয়, তিনি জীবিকার তাগিদে বেছে নিয়েছেন তিন চাকার এই রিকশা। মনির জানান, শুরুতে এক শতক জায়গা ছিল। চোখের চিকিৎসা করানোর জন্য শেষ সম্বলটুকুও বিক্রি করে হয়ে যান একদম নিঃস্ব। বর্তমানে পরের জায়গায় থাকেন। জন্ম থেকে অন্ধ হলেও এভাবে বছরের পর বছর তার চোখের আলো হয়ে পথ দেখাতেন তার ছেলে-মেয়েরা। বড় ছেলে রমজান আলীকে দিয়ে জীবিকার সন্ধানে প্রথমে নেমে পড়েন। ছেলে বড় হওয়ার পর তারপর বড় মেয়ে বিবি হাফসু বাবার চোখের আলো হয়ে রিকশায় ওঠেন। অন্ধ বাবার অজান্তে সেও এক সময় বড় হয়ে উঠেন। বন্ধ করে দেন বাবার সঙ্গে রিকশায় করে রাস্তায় বের হওয়া। এক পর্যায়ে অভাবের তাড়নায় মানুষের বাসায় গৃহস্থলি কাজে নেমে পড়েন। আর তখন দায়িত্ব নেন ছোট মেয়ে আফরোজা আক্তার ফারিয়া। বাবার রিকশার সামনে বসে পথ দেখিয়ে দেন ফারিয়া। আর টাকা হিসেব-নিকাশের কাজটাও করেন। ফারিয়া সুন্দরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। বারার সঙ্গে বের হলে ঠিকমতো ক্লাস করতে পারেন না। মনিরের স্ত্রী জাহানারা আক্তার আক্তার জানান, মনিরের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে ২৭ বছর। বিয়ের পর থেকে একচালা এক রুমের ঘরটিই পাকঘর ও থাকার ঘর। বর্তমানে বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে-ছেলে বাবা-মা সবাই থাকে একসঙ্গে। উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. শহীদুল্লাহ জানান, মনিরের জন্য মাসিক ৫শ টাকা এবং ১০ হাজার টাকা অনুদান দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বেলাল হোসেন জানান, আত্মপ্রত্যয়ী অন্ধ মনির হোসেন চান না ভিক্ষা করতে। চান উপযুক্ত একটা কাজ। অলস ও বেকার যুবকদের দেখিয়ে দিয়েছেন মানুষের দ্বারা সব কিছু সম্ভব। মানুষ পারে না পৃথিবীতে এমন অসাধ্য কিছু নেই। ইচ্ছা থাকলেও আজ মনির হোসেনের পক্ষে সম্ভব নয়। তার প্রয়োজন সাধ্যের মধ্যে কিছু করা। আর এর জন্য এগিয়ে আসবেন সরকার ও বিত্তবানরা এমনটা দাবি করেছেন তিনি।
সুত্রঃ এমটিনিউজ২৪