মো: আকরাম খাঁন: আঙ্গুর বা দ্রাক্ষা (ইংরেজি Grape) এক প্রকারের ফল যা লতা জাতীয় দ্রাক্ষালতা গাছে ফলে থাকে। ৬ হতে ৩০০টি পর্যন্ত আঙুর এক সাথে একই থোকায় ধরে থাকে। এর রঙ কালো, নীল, সোনালী, সবুজ, বেগুনি-লাল, বা সাদা হতে পারে। পাকা আঙুর সরাসরি খাওয়া হয়, বা এটি দিয়ে রস, জেলি, মদ, বা আঙুর-বীজের তেল তৈরি করা হয়।
আঙুরকে শুকিয়ে কিসমিস তৈরি করা হয়। বন্য আঙুরলতা অনেক ক্ষেত্রে পরগাছা হিসাবে অন্য গাছকে গ্রাস করে ফেলে।
আঙুরের উপকারিতাঃ
• আঙুরে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা বার্ধক্য রোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
• রাতের খাবার খাওয়ার পরে এক গ্লাস আঙুরের জুস আপনার হার্টের সমস্যা সারিয়ে দিতে পারে।
• কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রোধ করতে আঙুরের জুড়ি মেলা ভার। কেননা, এতে বিভিন্ন অর্গানিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি থাকে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে সাহায্য করে।
• আঙুরে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস নামে এক ধরনের উপাদান থাকে। যা শরীরের রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে। যাঁরা রক্ত সঞ্চালনের ভারসাম্যহীনতায় ভোগেন, তাদের ক্ষেত্রে আঙুর খুবই উপকারী।
• ক্যান্সার রোধেও আঙুরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আঙুরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফামিটরির মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকে। যা ক্যান্সার রোধে সাহায্য করে।
• মাথাব্যাথা বা মাইগ্রেনের সমস্যা দূর করতেও আঙুরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
• হজমের সমস্যার সমাধানেও আঙুরের ভূমিকা অপরিসীম।
• দেহে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে আঙুর। যার ফলে কিডনি ভাল থাকে।
• আঙুরে ফাইটোকেমিক্যাল, ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ত্বকের জন্যও এই ফলটি বেশ উপকারী।
• চোখ ভাল রাখতেও এই ফল বেশ কার্যকারী।
• বহু মানুষের চুলে খুশকির সমস্যা রয়েছে। অনেকের চুলের ডগা ফেটে গিয়ে রুক্ষ হয়ে পড়ে যায়। এই সমস্ত সমস্যার সমাধানে আঙুর বেশ উপকারী।
আঙুরগাছ অনেকদিন বাঁচে বলে একবার বিনিয়োগ করার পর পরিচর্যা খরচ ছাড়া আর কোনো খরচ হয় না।
ছাদে বা ড্রামে চাষ করবেন যেভাবেঃ
ছাদে আঙুর চাষ করার জন্য টব বা অর্ধ ড্রাম ব্যবহার করতে হবে। টবে চারা রোপণের সময় প্রতি টবে ২০-২৫কেজি গোবর সার, সরিষার খৈল ১০০গ্রাম, ইউরিয়া ১০০গ্রাম, টিএসপি ৫০০ গ্রাম ও এমওপি ৪০০গ্রাম দিতে হবে। চারার বয়স যখন ১-৩বছর হবে, তখন ১৫কেজি গোবর, ৫০গ্রাম সরিষার খৈল, ১০০গ্রাম ইউরিয়া, ৫০০গ্রাম টিএসপি ও ৫০০গ্রাম এমওপি দিতে হবে। চারার বয়স চার বছরের অধিক হলে ২০-২৫কেজি গোবর সার, ১০০গ্রাম সরিষার খৈল, ১৫০গ্রাম ইউরিয়া, ৬০০গ্রাম টিএসপি ও ৫০০গ্রাম এমওপি দিতে হবে। বছরের জানুয়ারি মাসের সময় সার প্রয়োগ করতে হবে।

চারা রোপণের পর ফুল আসার সময় ও খরার সময় গাছে পরিমিত সেচ দিতে হবে। মাটিতে যেন অম্লের পরিমাণ বেড়ে না যায়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। ফলের গুণাগুণ বৃদ্ধির জন্য আঙুরের গুচ্ছ থেকে অপরিণত ফল ছোট অবস্থায় ফেলে দিতে হবে। আঙুর পাকার মাসখানেক আগে ২০গ্রাম পটাশ সার এক লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে দিলে আঙুরের মিষ্টতা বাড়ে। যখন আঙুর মুগডালের মতো হবে, তখন জিবরেলিক এসিড নামের হরমোন গাছে স্প্রে করলে ফল ঝরা বদ্ধ হবে। আঙুরের আকার বড়, মিষ্টি এবং ফেটে যাওয়া রোধ করবে। প্রয়োজনবোধে বালাইনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফল পাকার পর এমনভাবে সংগ্রহ করতে হবে যেন থোকার আঙুরে আঙুলের ছোঁয়া না লাগে। প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ৮ থেকে ৮ দশমিক ৫কেটি পাকা আঙুর পাওয়া যেতে পারে।শুধু আঙ্গুর চাষ করে তিন লাখ টাকা তিনি আয় করেছেন।