ইউরোপের বিভিন্ন লিগে খেলার ধরন ভিন্ন। লিগগুলোতে শিরোপা দৌড়েও দেখা যাচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্য। তবে একটি ব্যাপারে মিল আছে ঠিকই। সব লিগেই গোল উৎসবে মেতেছেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডরা। বিশ্বকাপ সামনে রেখে আর্জেন্টিনার জন্য এ এক সুখবরই।
গত ম্যাচে লেস্টার সিটিকে নিয়ে রীতিমতো খেলেছেন সার্জিও আগুয়েরো। ৫-১ ব্যবধানে জেতা ম্যাচে একাই ৪ গোল করেছেন ম্যানচেস্টার সিটি-ফরোয়ার্ড। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় আগুয়েরো, যিনি তিনটি ভিন্ন ম্যাচে ন্যূনতম চারটি করে গোল করলেন! এ মৌসুমে এমনিতেও দুর্দান্ত ফর্মে আছেন আগুয়েরো। পেপ গার্দিওলা নাকি তাঁকে দলে আর রাখতে রাজি নন, এমন গুঞ্জনের মাঝেও লিগে ২১ গোল তাঁর! শুধু ২০১৮ সালেই ৯ গোল। সব প্রতিযোগিতা মিলে এক মাসেই ১৩ গোল হয়ে গেছে আগুয়েরোর।
শনিবার দারুণ এক গোল করেছেন গঞ্জালো হিগুয়েইন। গত সপ্তাহে সাসসুলোর বিপক্ষে হ্যাটট্রিকও ছিল তাঁর। লিগে শুরুর দিকের বাজে ফর্ম কাটিয়ে এর মধ্যেই ১৪ গোল হয়ে গেছে। খেলার ধারও বেড়েছে বেশ। জুভেন্টাসও তাই শিরোপা দৌড়ে নাপোলিকে তাড়া করতে পারছে ভালোভাবে। পাওলো দিবালার চোটও তাই এখনো কোনো সমস্যা হয়ে দেখা দেয়নি ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নদের জন্য।
গত সপ্তাহে হ্যাটট্রিক করা তারকাদের মাঝে আছেন অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়াও। ফ্রেঞ্চ কাপে নেইমারদের অনুপস্থিতিতে আলো ছড়ানো ডি মারিয়ার অবশ্য আর্জেন্টিনা দলে জায়গা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না কখনোই। তবে এলোমেলো শুরুর পর মৌসুমের গুরুত্বপূর্ণ অংশে এসে ডি মারিয়ার ফর্মে ফেরায় খুশিই হবে আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা।
চোটে মাঠের বাইরে সময় কাটানোর আগে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন দিবালাও। ডিসেম্বরের মধ্যেই লিগে ১৪ গোল করে হিগুয়েইনকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছিলেন। তাঁর মতোই চোটের কারণে মাঠের বাইরে আছেন মাউরো ইকার্দি। চোটে পড়ার আগেই ১৮ গোল করে ফেলে জাতীয় দলের কোচ সাম্পাওলিকে বার্তা দিয়ে রেখেছেন ইকার্দি। ডিয়েগো ম্যারাডোনা যতই ইকার্দিকে বাদ দিতে বলুন না কেন, ইন্টার মিলান অধিনায়ককে দলে না নিয়ে উপায় নেই আর্জেন্টাইন কোচের।
সব শেষে লিওনেল মেসি তো আছেনই। সব প্রতিযোগিতা মিলে এ মৌসুমে এরই মাঝে ২৭ গোল হয়ে গেছে। লিগে বার্সেলোনার অপরাজিত যাত্রার কৃতিত্বের অর্ধেক ভাগ যদি ভালভার্দের হয়, বাকিটা মেসির। যদিও গত দুই-তিন ম্যাচে বার্সার ক্ষুধাটা যেন একটু কম কম লাগছে।
মেসিরা সবাই এমন ফর্ম ধরে রাখতে পারলে রাশিয়া বিশ্বকাপে গোল নিয়ে অন্তত ভাবতে হবে না হোর্হে সাম্পাওলিকে। তবে এর উল্টো দিকেই আছে দুশ্চিন্তা। ইউরোপিয়ান লিগগুলোয় আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডরা এমন আগুনে না হোক, ভালো ফর্মে থাকেন সব সময়ই। তবু বাছাইপর্বে গোলখরায় ভুগেছে আর্জেন্টিনা। এক মেসিই শুধু ৭ গোল করেছিলেন। ফরোয়ার্ডদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোল ডি মারিয়ার, মাত্র দুটি। হিগুয়েইন করতে পেরেছেন মাত্র ১ গোল। বাকিরা সেটাও পারেননি।
যেখানেই প্রত্যাশা, সেখানেই যেন আর্জেন্টিনা সমর্থকদের দীর্ঘশ্বাস। তবে এবার কি অন্য কিছু হবে?