আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে সিলেট যাত্রা শুরু করেছিল ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। দেশের সবচেয়ে নয়নাভিরাম এ স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ মাঠে বাংলাদেশ দলের পা পড়েনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রোববার সেই টাইগারদের প্রথম হুঙ্কারে মুখর হবে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। কিন্তু সবুজে ঘেরা এ মাঠে নামার আগে বাংলাদেশ দল যে বড্ড বিপদে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে জয় ছাড়া বিকল্প কোনো ভাবনা নেই।জিতলেই সিরিজ ড্র’ হবে। তাতে কিছুটা হলেও বাঁচবে মান। ১৭ই জানুয়ারি জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল টাইগারদের নতুন বছরের ক্রিকেট মিশন। টানা তিন জয়ে সিরিজের ফাইনাল নিশ্চিত করে উড়ছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন ছন্দ পতন। নিজেদের মাঠে খেই হারিয়ে ফেলে দল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডের পর হাতছাড়া হয় টেস্ট সিরিজও। এমনকি শেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে হারের বৃত্তে বাংলাদেশ। পরশু সিলেটে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি দিয়ে বৃহস্পতিবার হবে এক মাস ধরে চলা এ লড়াই। পুণ্য ভূমিতে শেষ ম্যাচটি তাই এ সিরিজে জয়ে ফেরার শেষ সুযোগ। গতকাল দুপুর ১২টার ফ্লাইটে ঢাকা ছাড়ে বাংলাদেশ দল। এরপর সিলেট পৌঁছে হোটেলে উঠেছে বিকালের আগেই। বাংলাদেশ দল প্রথম হলেও এ দলের প্রায় সব ক্রিকেটারই বিপিএলে সিলেটের এ স্টেডিয়াম মাতিয়ে গেছেন।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নিজেদের ইতিহাসে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ১৯৩ রান সংগ্রহ করেছিল ৫ উইকেট হারিয়ে। কিন্তু লঙ্কানরাও কম যায়নি। বাংলাদেশের বোলিং ব্যর্থতার সুযোগে তারাও তুলে নিয়েছে রেকর্ড জয়। তারা এর আগে এত বড় লক্ষ্য তাড়া করে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জয়ের দেখা পায়নি। এখন তাদের সামনে সুযোগ সিরিজ জিতে শেষটাও নিজেদের করে নেয়ার। আর বাংলাদেশের সামনে শেষ সুযোগ মান রক্ষা ও জয়ে ফেরার।
এত রেকর্ড রান করেও কেন এমন হার? এ শ্রীলঙ্কা দলই তো কিছু দিন আগেও ছিল খাদের কিনারে। কী মন্ত্র দিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে নিজ দেশের ক্রিকেটারদের? কতটা পার্থক্য এ দুই দলের? সংবাদ সম্মেলনে টি-টোয়েন্টির ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বলেন, ‘পার্থক্য হচ্ছে ধারাবাহিকতায়। কখনো আমাদের বোলাররা ব্যর্থ হচ্ছে আবার কখনো ব্যাটসম্যানরা। এটাই দুই দলের মধ্যে ব্যবধানটা গড়ে দিচ্ছে।’
বাংলাদেশ দল মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছিল ব্যাটিং ব্যর্থতায়। এরপর চট্টগ্রাম টেস্টে ব্যাটসম্যানরা ঘুরে দাঁড়ায়। কিন্তু বোলার ও ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় হারতেই বসেছিল সেই ম্যাচ। শেষ পর্যন্ত ব্যাটসম্যানরা ম্যাচটি ড্র করে বাঁচিয়ে দেন। এরপর টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় রান করেও হার! এ জন্য ফের দায়ী বোলিং। এ নিয়ে অধিনায়কও বোলারদের দিকে আঙুল তোলেন। তিনি বলেন, ‘ব্যাটসম্যানরা তাদের কাজ করেছে। যদিও রানটি ২০০-এর উপরে নিতে পারতেন তারা। কিন্তু হয়নি। তবে বোলাররা ভালো লেন্থে বল করতে পারেনি। শুরুতেও চাপ প্রয়োগ করে উইকেট নিতে পারেনি। এই উইকেটে ঠিক লেন্থে বোলিং করা গুরুত্বপূর্ণ। উইকেট ভালো ছিল। বল ভালো ব্যাটে আসছিল। আমরা ভালো লেন্থে বোলিং করতে পারিনি।’
প্রথম ওয়ানডের জন্য টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সেই দলে নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান থাকলেও ইনজুরির কারণে মাঠে নামতে পারেননি। সেই সঙ্গে ইনজুরির কারণে দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবালও ছিলেন একাদশের বাইরে। তাই দলে অভিষেক হয়েছিল চার ক্রিকেটারের। এদিন দলে ফিরে প্রথম ফিফটি হাঁকিয়ে সৌম্য তা পুষিয়ে দিয়েছেন অনেকটাই। চোট নিয়েও মাঠে নেমেছেন মুশফিকুর রহীম। ৬৬ রানে ছিলেন অপরাজিত। অধিনায়ক নিজেও ব্যাট হাতে রান করেন। কিন্তু রুবেল হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান ও সাইফুদ্দিন এ তিন পেসারই সব কিছু এলোমলো করে দিয়েছেন। অভিষেকে নাজমুল অপু দারুণ বল করলেও তরুণ আফিফ হোসেন ছিলেন ব্যর্থ। জাকির হাসান তার প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে ব্যাট হাতে আত্মবিশ্বাস নিয়ে শুরু করলেও ১০ এর বেশি করতে পারেননি। নিজেকে অবশ্য প্রমাণের সুযোগই পাননি আরেক অভিষিক্ত আরিফুল হক। তবে তিনি মাঠে দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ের নমুনা দেখিয়েছেন। ঘুরে দাঁড়াতে হাল ছাড়েননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় একটা বাজে ম্যাচ গেছে। হয়তো বা ওরা পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারেনি।’
হারের পরেও অধিনায়ক আস্থা রাখছেন তরুণদের উপর। বিশেষ করে সাইফ উদ্দিনকে নিয়ে তিনি হতাশ হননি। অধিনায়ক বলেন, ‘খেলতে খেলতেই শিখবে, অসুবিধা নেই। সাইফ উদ্দিনই একদিন ম্যাচ জেতাবে বাংলাদেশকে। এটা আমি বিশ্বাস করি। যত দ্রুত ভুলগুলো থেকে শিখবে, ওর জন্য ভালো, আমাদের দলের জন্যও ভালো। আমার মনে হয় শুধু ওর ঘাড়ে দোষ দেয়া ঠিক হবে না। আমরা জিতি দল হিসেবে, হারিও দল হিসেবে। আমার মনে হয় না কারও দিকে আঙুল তোলা ঠিক। পুরো বোলিং ইউনিটই ব্যর্থ হয়েছে অপু ছাড়া। অপু ভালো বোলিং করেছে। আমাদের বোলিং নিয়ে আরো কাজ করতে হবে।’ বিশেষ করে ফ্লাট উইকেটে পেসারদের বাউন্সার ও ইয়র্কার দেয়া শিখতে হবে। তা না হলে সফলতা সম্ভব নয়।