ছোটবেলা থেকে খেলাধুলার পাগল ছেলেটি। ফুটবল-ক্রিকেট দুটোই যেন ছিল তাঁর সমান প্রিয়। খেলতেনও ভালো, তাই ২২ বছরের ওই তরুণের মধ্যে বিপুল সম্ভাবনা দেখতেন স্বজনেরা। হঠাৎ করেই সব ওলট-পালট হয়ে যায়। এক ‘দুর্ঘটনায়’ খেলাপাগল ছেলেটির দুহাতেরই পাঞ্জা উড়ে যায়।
ত্রিপুরার কাজল দের জীবনের শুরুটা এমন। তবে এত বড় দুর্ঘটনা কি দমাতে পেরেছিল খেলাপাগল এই তরুণকে? খেলার মাঠে ফিরতে না পারলেও খেলার টেবিল দাবিয়ে বেড়াচ্ছেন কাজল দে। নিজে খেলছেন, এর সঙ্গে ছোট শিশুদের শেখাচ্ছেন টেবিল টেনিসের অ-আ-ক-খ।
প্রথম আলোর মুখোমুখি হয়ে কাজল বলেন, ‘আজ থেকে ২৭ বছর আগে “দুর্ঘটনায়” উড়ে যায় দুই হাত। তাই ফুটবল বা ক্রিকেট মাঠে আর নামা হয়নি। মাঠের বাইরে বসেই দেখতে হতো অন্যদের খেলা। এইভাবেই চলছিল।’
ওই দুর্ঘটনার নয় বছর পর স্থানীয় পোলস্টার ক্লাবে টেবিল টেনিস খেলতে শুরু করেন কাজল। হাত কাটা তো কী হয়েছে, অদম্য মানসিক শক্তি নিয়ে বিশেষ ধরনের ব্যাটের সাহায্যে কাজল শুরু করেন টেবিল টেনিসের সাধনা।
রাজ্য সরকারের এক মন্ত্রণালয়ের কর্মী কাজলের স্বপ্ন ছিল, শারীরিক প্রতিবন্ধী খেলোয়াড় হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে নামবেন। কিন্তু হয়নি। তবে এ নিয়ে আর কোনো ক্ষোভ রাখেননি তিনি। রাজ্যস্তরে সাধারণ বিভাগেই একাধিক সাফল্য পেয়েছেন।
নিজে খেলার পাশাপাশি কাজল এখন নতুনদের তৈরি করছেন। জানালেন, তাঁর কোনো কোচ ছিল না। নিজে থেকেই খেলাধুলার প্রতি ভালোবাসা আর অনুশীলনের মাধ্যমে শিখেছেন প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে। তাঁর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক ছেলেমেয়ে রাজ্য ও জাতীয় স্তরে সাফল্য পাচ্ছে। তাঁর নিজের মেয়েও জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। বছর পঞ্চাশের কাজল অবশ্য নিজে আর সাধারণ বিভাগে নামেন না। রাজ্যস্তরের অফিস টেবিল টেনিসে তাঁর অবস্থান এখন দুই নম্বরে। এবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যেই নামবেন। তবে প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে নয়, বরং সম্পূর্ণ শারীরিকভাবে সক্ষমরাই হবেন হাতকাটা কাজলের প্রতিদ্বন্দ্বী।