(ইউএনবি) রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো বর্বর দমন-নিপীড়নের মাধ্যমে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত মিয়ানমারের ১৩ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
২৭ জুন, বুধবার মানবিধকার বিষয়ক সংস্থাটি একটি নতুন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে নির্যাতনের বিস্তারিত প্রমাণ হাজির করা হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে।
‘উই উইল ডেসট্রয় এভরিথিং’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কিছু ফোন রেকর্ডের কথোপকথন তুলে ধরেছে। যেখানে সেনাবাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তা সেনা সদস্যদের সঙ্গে মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিষয় নিয়ে কথা বলছেন বলে জানানো হয়েছে।
২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়। এই নির্যাতনকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পরিচালিত অভিযান আগস্টে শুরু হয়। এরপর থেকে গত ৯ মাসে অ্যামনেস্টির তদন্ত দল রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নির্যাতনের প্রমাণ সংগ্রহ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যামনেস্টির তদন্ত দল শত শত নির্যাতিত রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তাদের সাক্ষাৎকারেই উঠে আসে নির্যাতনের নতুন এ ভয়ংকর তথ্য। কীভাবে তাদেরকে মিয়ানমার থেকে বের করে দেওয়ার কৌশল অবলম্বন করা হয় তাও উঠে আসে সাক্ষাৎকারে। ছবি, ভিডিও ক্লিপস, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং অস্ত্র বিশেষজ্ঞকে তথ্য যাচাই-বাছাই কাজে ব্যবহার করা হয়।
অ্যামনেস্টি বলছে, এসব কিছু এটাই প্রমাণ করে যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল মিন অং এবং আরও ১২ জন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের তালিকাভুক্ত মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। এ ছাড়া তিনজন সীমান্ত পুলিশও এই রক্তপাতের সঙ্গে জড়িত। তাদের সবাইকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানায় সংগঠনটি।
এক সপ্তাহের বেশি সময় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পর্যবেক্ষণ করা অ্যামনেস্টির গবেষক ম্যাথিউ ওয়েলস প্রতিবেদনে বলেন, ‘উত্তর রাখাইন রাজ্যের গ্রামগুলোতে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, আগুন দেয়া এবং জোরপূর্বক অনাহারের কাহিনী রচনা করেছে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী।
এটা কোনো সম্প্রদায়ের কাজ নয়। রোহিঙ্গা জনগণের ওপর এটা ছিল অত্যন্ত সংঘবদ্ধ এবং পদ্ধতিগত হামলার অংশ। এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। কয়েকশ’ রোহিঙ্গ গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয় এবং সেখানকার জনগণকে নির্যাতন, নারীদের ধর্ষণ করা হয়। কিছু কিছু পুরুষ এবং বালককে উল্টো করে বেঁধে পেটাতে পেটাতে মেরে ফেলা হয়।’
সেনারা নারী এবং মেয়েদের গণধর্ষণ করতো। অ্যামনেস্টি এমন ১১ জন নারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবির কথা উল্লেখ করে অ্যামনেস্টি বলছে, সেখানে গ্রামের বাড়িঘরে আগুন দেয়া হয়। বাড়ির ভেতরেই অনেকেই পুড়ে মারা গেছেন।
সেনারা বৃদ্ধ এবং শিশুদের ওপর বেশি নির্যাতন করে বলে জানায় সংগঠনটি। ২০০ পাতার এই প্রতিবেদনে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি, সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর সম্পর্কেও বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
মিয়ানমারের নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চি তার দেশের আর্মিদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় ব্যাপক হতাশা প্রকাশ করেন ওয়েলস। তিনি বলেন, ‘অপরাধের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে যে প্রতিজ্ঞা করেছিল তার (সু চি) সরকার তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে।
উপরন্তু অপরাধের বিষয়টি বার বার অস্বীকার করে সু চি পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছেন।’