ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) বিলুপ্তির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী তুমুল আন্দোলনের মধ্যেই মার্কিন ফেডারেল কোর্ট ২ জুলাই সোমবার এক রুলিংয়ে সীমান্ত অতিক্রমের পরই এসাইলাম প্রার্থীদের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিল। ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত ফেডারেল কোর্টের জজ জেমস বোসবার্গ প্রদত্ত এই অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে এখন থেকে এসাইলাম প্রার্থীদের ঢালাওভাবে গ্রেফতার করে অনির্দিষ্টকালের জন্যে ডিটেনশন সেন্টারে আটক রাখা যাবে না।
এই আদেশে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার সময় যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রদর্শন করতে সক্ষম হন যে, তাকে নিজ দেশে ফেরৎ পাঠালে অবর্ণনীয় দুর্দশা অথবা প্রাণহানির ঝুঁকিতে পড়বেন, তাহলে তাকে প্যারলে মুক্তি দিতে হবে। তবে আবেদনকারিদের মধ্যে যারা ফাইটে ঝুঁকিপূর্ণ কিংবা সামাজিক অশান্তির কারণ বলে বিবেচিত হন, তাহলে তাদের আশ্রয়ের আবেদন নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আটক রাখা যাবে।
আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের ইমিগ্র্যান্টস রাইটস প্রজেক্টের স্টাফ এটর্নী মাইকেল ট্যান বলেছেন, এই নির্দেশে এটাই প্রমাণিত হলো যে, নিজেদের তৈরি আইন নিজেরাই লংঘন করছিল হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয় তথা আইসের প্রতিনিধিরা।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশে মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত অতিক্রমকারিদের ঢালাওভাবে ডিটেনশন সেন্টারে রাখার ঘটনাবলিকে সংবিধানের পরিপন্থী হিসেবে অভিহিত করে আদালতের শরণাপন্ন হয় আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, নিজ দেশে নিরাপত্তাহীনতার জন্যে ভিটে-মাটি ও স্বজন ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর যারা আশ্রয় প্রার্থনা করেন, তাদেরকে বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত প্যারলে মুক্তি দেয়ার কথা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সে রীতি তোয়াক্কা না করে সকলকে গ্রেফতার করে অনির্দিষ্টকাল ডিটেনশন সেন্টারে রাখার অঘোষিত নির্দেশ জারি করেছেন।
মামলার শুনানির সময় বাদিপক্ষের এটর্নী তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের মাধ্যমে আদালতকে অবহিত করেন যে, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে এসাইলাম প্রার্থীর ৯০ ভাগকেই প্যারলে মুক্তি দেয়া হত। কিন্তু ট্রাম্প আমলে সে হার ০% এ নেমে এসেছে। বিশেষ করে মিশিগানের ডেট্রয়েট, টেক্সাসের এল পাসো, লস এঞ্জেলেস, নিউ ইয়র্ক এবং ফিলাডেলফিয়ায় আইসের ফিল্ড অফিসের আওতায় একজনকেও প্যারলে মুক্তি দেয়া হয়নি। কয়েক হাজার বাংলাদেশিকেও ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে আটক রাখা হয়েছে এসব স্থানে।
বিচাক তার ৩৮ পাতার মতামতে এহেন অবস্থাকে কোনভাবেই বিধিসম্মত নয় বলে মন্তব্য করেছেন। নির্দেশ দিয়েছেন, প্রতিটি আবেদনকে আলাদা ভাবে পর্যালোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্যে। অস্থায়ী এই নিষেধাজ্ঞা স্থায়ী করা হবে কিনা সে ব্যাপারে আরেকটি শুনানীর তারিখ দেয়া হয়েছে ১০ জুলাই। অর্থাৎ অন্তত ১০ জুলাইয়ের মধ্যে যারা গ্রেফতার হয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করবেন, তাদেরকে প্যারেলে মুক্তি দিতেই হবে।
মে মাসে ট্রাম্পের আরেক নির্দেশে মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রম করে বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারিদের সাথে থাকা শিশু সন্তানকে কেড়ে নেয়ার পর ঐসব অভিভাবকের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের মামলা হয়েছে। শিশুদের বিচ্ছিন্ন করার ঘটনাকে অমানবিক ও বর্বরতার সামিল হিসেবে সারা যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ হচ্ছে। এ অবস্থায় ট্রাম্প তার সিদ্ধান্ত পাল্টেছেন। এবং ফেডালে কোর্টও নির্দেশ দিয়েছে ৩০ দিনের মধ্যে ঐসব শিশুকে অভিভাবকের কাছে ফেরৎ দেয়ার জন্যে। তবুও কেড়ে নেয়া শিশুরা এখন পর্যন্ত অভিভাবকের সাথে মিলিত হতে পারেনি।
তবে ফেডারেল জজের সর্বশেষ এ সিদ্ধান্তে আইসের অমানবিক আচরণে কিছুটা পরিবর্তন ঘটবে বলে অনেকে আশা করছেন। প্রসঙ্গত, আইস বিলুপ্তির দাবিতে সারা আমেরিকায় বিক্ষোভ চলছে। ইউএস সিনেটের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ অনেক কংগ্রেসম্যানও রাজপথে নেমেছেন আইস বিলুপ্তির দাবিতে।