আওয়ামী লীগকে ছাড়া জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা হাস্যকর- ওবায়দুল কাদের বলেছেন

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে রেখে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার ঘোষণা হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সাংগঠনিক কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে আয়োজিত রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে কাদের এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ছাড়াও ১৪ দলে আরো দল রয়েছে। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি রয়েছে। দেশে আমাদের জোট ও মহাজোটের বিশাল সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে। দেশের বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কখনো জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।’

সেতুমন্ত্রী আরো বলেন, জাতীয় ঐক্যের নামে দেশে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। যা দেশের জন্য কখনো শুভ হতে পারে না।

সভায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপদপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এস এম কামাল হোসেনসহ রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ‘জাতীয় ঐক্য’ শব্দ দুটি ব্যবহার না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যে নামেই তারা যান, ‘জাতীয় ঐক্য’ শব্দ দুটি তাদের ব্যবহার না করাই ভালো। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকা ভালো, গণতন্ত্রে প্রতিযোগিতা থাকবেই। আর নির্বাচন মানেই প্রতিযোগিতা, সেটা নির্বাচনে হবে। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে যেকোনো জোটকে আমরা স্বাগত জানাই।’

কাদের আরো বলেন, ‘আমরাও ১৪ দলীয় জোট করেছি। এ ছাড়া আমাদের মহাজোট রয়েছে। জাতীয় পার্টি মহাজোটে রয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বেও ২০ দলীয় জোট রয়েছে। আবার যুক্তফ্রন্ট নামেও একটি জোট আত্মপ্রকাশ করেছে। নির্বাচন সামনে রেখে জোট-মহাজোট গঠিত হতে পারে। তবে আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে কখনো জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষণা করবে, কখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে এবং কখন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটা সরকার বা দলের কাজ নয়। ইসিকে বিব্রত করা কারো উচিত নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, যার যে দায়িত্ব তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কথা বললে দল, সরকার ও গণতন্ত্রের জন্য ভালো।

এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার কখন হবে, সরকারের আকার কী হবে, মন্ত্রিসভায় কয়জন থাকবেন তা নির্ধারণ করার এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর। এ বিষয়ে তিনি ছাড়া আর কেউ জানেন না।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনগণের কাছে যে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠি হলো দেশের জনগণ। দলীয় নেতাকর্মী নয়। কারণ, দল আর নির্বাচন এক কথা নয়। কেউ দলের মধ্যে প্রভাবশালী থাকতে পারেন। কিন্তু জনগণের কাছে গ্রহণযগোগ্য নাও হতে পারেন। জনগণের কাছে যে বেশি জনপ্রিয়, তাঁকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে।

সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের বলেন, দলীয় মনোনয়ন লাভের অসুস্থ প্রতিযোগিতা দলের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলার সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলের দায়িত্বশীল নেতারা এ ধরনের প্রতিযোগিতা করলে কর্মীরা কী করবে? তবে শুধু একজন মনোনয়ন চাইবে, তা হতে পারে না। মন্ত্রী বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সামনে যে প্রচার-প্রচারণা থাকবে বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে, সেটা নিজ দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে হলে তা আত্মঘাতী হবে। নিজেদের মধ্যে দলাদলি করে এক গ্রুপ অপর গ্রুপকে অবাঞ্ছিতকরণে তা দলের জন্য শুভ ফল বয়ে আনবে না।

বরগুনা ও দিনাজপুরের ঘটনা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এ ধরনের ঘটনা বরদাশত করা হবে না। যারা দলের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ধরনের অশুভ প্রতিযোগিতায় দলীয় এমপি মনোনয়ন পাওয়া যাবে বলে কেউ মনে করলে তা ভুল হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *