একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে শেয়ারবাজারের সূচক, লেনদেন ও বাজার মূলধন। বর্তমানে চাঙ্গাভাব বিরাজ করায় বিনিয়োগকারীরাও ঝুঁকছে বাজারে। ফলে নির্বাচনের পর গত এক মাসে ৪০ হাজার বিও (বিনিফিসিয়ারি ওনার) অ্যাকাউন্ট বেড়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্বাচনের আগে বেশ কিছুদিন বাজারে মন্দাভাব ছিল। কিন্তু বছরের শুরু থেকেই মার্কেট ইতিবাচক ধারায়। এর কারণ হলো- ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মুনাফা কম হওয়ায় সাধারণ মানুষ এখন শেয়ারবাজারকে বিনিয়োগের উত্তম জায়গা মনে করছে। যার প্রভাব পুঁজিবাজারে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ ছাড়া সরকারের ধারাবাহিকতাও একটা আস্থার সৃষ্টি করেছে।একই সঙ্গে বাজারে নতুন কোম্পানি আসছে যে কারণে বিনিয়োগকারীরা বাজারে ফিরে আসছেন।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৮২১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। নির্বাচনের আগে ৫ হাজারের ঘরে উঠা-নামা করছিল। গত এক মাসে প্রায় সূচক এক হাজার পয়েন্ট বেড়েছে। অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক সূচকটি বেড়েছে। সূচকের পাশাপাশি লেনদেনেও ভালো গতি রয়েছে। ডিএসইতে লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। একই অবস্থা সিএইতেও।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, এর আগের জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী এক সপ্তাহের শেয়ারবাজারের সূচকের গতি-প্রকৃতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বরের পর ডিএসইর সূচকে ছিল মিশ্র অবস্থা। আর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর সূচকের একটানা উত্থান ঘটেছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরের ৬ কার্যদিবসে ঢাকার বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৫৯ পয়েন্ট। আর গত ৩০শে ডিসেম্বরের ভোটের পর ৬ কার্যদিবসে ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছে ৩৮৬ পয়েন্ট।
ডিএসই’র বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক মাসে প্রায় সূচক এক হাজার পয়েন্ট বেড়েছে। ডিসেম্বরের শুরুতে সূচক ছিল ৫২৯০ পয়েন্টে। বর্তমানে সূচক ৫৮২১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। বাজার মূলধন ৪ লাখ ১৬ হাজার ৩৬০ কোটি টাকায় অবস্থান করছে। লেনদেনও হাজার কোটি টাকার ঘরে উঠা-নামা করছে। দেশের অপর বাজার সিএসইতেও উত্থান ধারা অব্যাহত রয়েছে।
সিডিবিএল পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নির্বাচনের পরপরই ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। ফলে বাড়ছে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার সংখ্যা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের শেষ মাসে ডিসেম্বরে বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয় ৮ হাজার। আগের মাসে নভেম্বরে বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয় ৩২ হাজার। আর এর আগের ছয় মাসে পুঁজিবাজারে মোট বিও অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৫৬ হাজার। চলতি বছরের প্রথম মাসে ৪০ হাজার বিও বৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ২০১০ সালের পর থেকে বিও অ্যাকাউন্ট উল্লেখযোগ্য হারে কমতে থাকে। বর্তমানে মোট বিও অ্যাকাউন্টের অর্ধেকের বেশি হচ্ছে শেয়ারশূন্য। বর্তমানে মোট বিওর মধ্যে শেয়ারশূন্য এবং ব্যবহার করা হচ্ছে না এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি।
সিডিবিএল’র সর্বশেষ তথ্যমতে, জানুয়ারি শেষে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখ ১৭ হাজার ৪৩টি। এক মাস আগে এ সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ ৭৭ হাজার ৭৯৫টি। এদিকে গত বছর সময়মতো বিও ফি পরিশোধ না করায় বাতিল হয়ে গেছে প্রায় আড়াই লাখ অ্যাকাউন্ট। বর্তমানে পুরুষ বিনিয়োগকারীর বিও সংখ্যা ২০ লাখ ৫৫ হাজার ৮৭৮টি।
নারীদের বিও রয়েছে ৭ লাখ ৪৮ হাজার ৩৯৩টি। আর কোম্পানির বিও রয়েছে ১২ হাজার ৭৭০টি। নিয়মানুযায়ী, জুন মাসে বিও ফি পরিশোধ না করলে সেসব অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব হিসাবে শেয়ার কিংবা টাকা থাকে, সেসব হিসাব বন্ধ হয় না। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। বর্তমানে বিও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা।
ডিএসই’র সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, নির্বাচনের আগে-পরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের শঙ্কা ছিল। কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পেয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকে আমানতের কম সুদ হওয়ায় শেয়ারবাজারে ঝুঁকছে মানুষ। তবে বাজারের এই উত্থানে কোনো কারসাজির ঘটনা ঘটছে কি-না, এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সতর্ক থাকতে হবে।