কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে নজিরবিহীনভাবে সিবিআই’র হানা নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় এক নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সিবিআই’র ডিএসপির নেতৃত্বে ৪০ জনের একটি দল কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে লাউডন স্ট্রিটে পুলিশ কমিশনারকে জেরা করতে তার বাড়ির সামনে এসেছিলেন। সেখানে পুলিশ আধিকারিকরা
তাদের বাধা দেয়। সিবিআইয়ের কাছে প্রযোজনীয় কাগজপত্র দেখতে চাওয়া হয়েছিল। সিবিআই অফিসাররা জানিয়েছেন, তাদের কাছে প্রযোজনীয় নথি রয়েছেন। এর কিছুক্ষণ পরেই কলকাতা পুলিশের উচ্চ আধিকারিকরা সিবিআই অফিসারদের আটক করে সেক্সপীয়র রোড থানায় নিয়ে যান বলে জানা গেছে। একপর্যায়ে সিবিআই অফিসারদের সঙ্গে কলকাতা পুলিশের আধিকারিকদের রীতিমত ধস্তাধস্তি হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সিবিআই অফিসারদের মুক্ত করতে কেন্দ্রীয় বাহিনী যে কোনো সময় আসরে নামতে পারে।
সেখানে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইপিএস অফিসারও রয়েছেন বলে জানা গেছে। মনে করা হচ্ছে, পরিস্থিতি মোকাবিলার পরবর্তী রণকৌশল ঠিক করা নিয়ে বৈঠক চলছে। মুখ্যমন্ত্রী এদিনই সকালে টুইট করে রাজীব কুমারকে নিয়ে মিডিয়ায় প্রকাশিত বিভ্রান্তিকর খবরের ব্যাপারে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতির সমালোচনা করে রাজীব কুমারকে বিশ্বের একজন সৎ ও সাহসী অফিসার বলে বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে এদিন বিকালে সিবিআই আধিকারিকরা লাউডন স্ট্রিটে পৌঁছানোর ঠিক এক ঘণ্টা আগেই লালবাজারে কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তরে বসে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (১) জাভেদ শামিম বলেছেন, রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের খবর ভুয়া। যারা এই খবর ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কিন্তু এর এক ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ কমিশনারের সিবিআই হানা দেয়ায় অবাক করেছে সবাইকে। গত শনিবার থেকে জল্পনা চলছিল যে সারদা এবং রোজভ্যালি চিট ফান্ড মামলায় কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে জেরা করতে চায় সিবিআই।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই সিবিআই সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছিল, সিবিআই অফিসারদের তরফে তাদের জানানো হয়েছে, রাজীব কুমারকে একাধিকবার হাজিরার জন্য নোটিশ পাঠানো হলেও তিনি আসেননি। ‘সর্বশেষ উপায়’ হিসেবে গ্রেপ্তারের মতো চূড়ান্ত পদক্ষেপের সংস্থান আছে বলেও ওই অফিসাররা ওই সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছেন। এদিকে সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআইয়ের সদর দপ্তরের সামনে গোটা এলাকা ঘিরে রেখেছেন রাজ্য পুলিশের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা। এ ছাড়া নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের আরেকটি অফিস এলাকা এবং কোল ইন্ডিয়ার গেস্ট হাউজে সিবিআইয়ের জয়েন্ট ডিরেক্টরের বাড়ির সামনেও কড়া পুলিশ প্রহরা মজুত করা হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, যাতে নতুন করে কোনো সিবিআই আধিকারিক ঘটনাস্থলে যেতে না পারেন সেজন্যই এই সিদ্ধান্ত। সিবিআই সূত্রে জানা গেছে, সারদা চিটফান্ডের মামলায় ধৃত দেবযানি মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে সিবিআই আধিকারিকরা জানতে পারেন সংস্থার মিডল্যান্ড পার্কের অফিস থেকে একটি লাল ডায়েরি এবং পেনড্রাইভ অভিযানের সময় বাজেয়াপ্ত করেন কলকাতা পুলিশের আধিকারিকরা।
সিবিআইয়ের দাবি, তদন্তভার হস্তান্তরের সময় সেই ডায়েরি এবং পেনড্রাইভ তাদের দেয়া হয়নি। কোথায় গেল সেগুলো? তদন্তে এই বিষয়ে পুলিশ কমিশনার সঠিক উত্তর দিতে পারবে বলে মনে করছে সিবিআই। তবে সিবিআই যে পদ্ধতিতে পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে হানা দিয়েছিল তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। নানা আইনি প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই ঘটনাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ঘটনা বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এদিকে পুলিশ প্রধানের বাড়ি থেকে বের হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এটি একটি রাজনৈতিক চক্রান্ত।