ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বৃটেনের বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া ব্রেক্সিট নিয়ে জটিলতা যেন কাটছেই না। বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া নিয়ে একটি খসড়া চুক্তির প্রতি ইইউ’র সমর্থন আদায় করলেও প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’ কোনোভাবেই বৃটিশ পার্লামেন্টের অনুমোদন পাচ্ছেন না। খসড়া চুক্তির ওপর ভোটাভুটিতে পরপর দু’দফা পরাজয় দেখার পর এই ইস্যুতে আবারো ভোট দেবেন বৃটিশ এমপিরা। ওদিকে, আরেকটি ভোটে ইতিমধ্যেই চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের বিপক্ষে নিজেদের মনোভাব জানিয়ে দিয়েছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ বৃটিশ এমপি। এখন তেরেসা মে’র ব্রেক্সিট পরিকল্পনা যদি তৃতীয় দফা হারের মুখ দেখে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, ব্রেক্সিট বিলম্বিত হতে চলেছে।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চেকার্সের ব্রেক্সিট প্রস্তাব এ সপ্তাহে আবারো ভোটাভুটির জন্য পার্লামেন্টে তোলা হবে। পূর্বের চুক্তিতেই সামান্য পরিবর্তন এনে তাতে পার্লামেন্টের অনুমোদন লাভের চেষ্টা করছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী। দু’দফা পরাজিত হওয়ার পর এবারের ভোটে জেতার জন্য তেরেসা মে’কে অনেকটাই ভাগ্যের ওপর ভরসা করতে হবে।কেননা, তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত রয়েছে যে, এবারের ভোটেও হারতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী যদি কোনো চমক সৃষ্টি করে রাতারাতি এমপিদের মনোভাবে পরিবর্তন ঘটাতে পারেন, তবেই তার জেতা সম্ভব। এর আগে, গত মঙ্গলবার পার্লামেন্টে চেকার্সের ব্রেক্সিট পরিকল্পনার ওপর দ্বিতীয় দফা ভোটাভুটি হয়। সেখানে ৩৯১-২৮২ ভোটে এমপিরা প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেন। এর আগে, গত ১৬ই জানুয়ারি প্রথম দফার ভোটেও হাউস অব কমন্সের ইতিহাসে সবচেয়ে শোচনীয় পরাজয় দেখেন প্রধানমন্ত্রী মে’। এবার নতুন পরাজয় এড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে এমপিদেরকে নিজের পক্ষে টানার চেষ্টা করছেন তেরেসা মে’। তবে তার এসব প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ না হলে তৃতীয় দফা ভোটাভুটি আটকে দেয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। ব্রেক্সিট নিয়ে রোববার একটি নিবন্ধ লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী মে’। সেখানে তিনি বলেন, এই চুক্তি ব্যর্থতার অর্থ হলো যুক্তরাজ্য আর কখনো ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বের হতে পারবে না। ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে বৃটেনের ভবিষ্যৎ জড়িয়ে আছে। সানডে টেলিগ্রাফ পত্রিকায় লেখা নিবন্ধে তেরেসা মে’ আরো বলেন, আগামী বৃহসপতিবার ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের সম্মেলনের আগে এমপিরা যদি তার প্রস্তাবিত এ চুক্তির বিষয়ে সম্মতিতে ফিরে না আসেন, তাহলে আগামী ২৯শে মার্চ ব্রেক্সিট কার্যকরের যে সময়সীমা রয়েছে, সেটা বাড়ানোর উপায় খুঁজবেন তিনি। এতে ব্রেক্সিট কার্যকরে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। তবে বিলম্বিত ব্রেক্সিট এড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী খসড়া চুক্তির প্রতি এমপিদের সমর্থন চেয়ে বলেন, চেকার্সের ব্রেক্সিট চুক্তির প্রতি সমর্থন দিয়ে দেশপ্রেমের পরিচয় দিন। তিনি মনে করেন, তৃতীয়বারের মতো যে ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন চুক্তি দেশটির হাউস অব কমন্সে উত্থাপিত হতে যাচ্ছে, তা অনুমোদন পাওয়া উচিত। কারণ চুক্তিটি সমর্থনের জন্য দরকার শুধু সম্মানজনক আপোষের মনোভাব। ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ায় আইরিশ ব্যাকস্টপ জটিলতা এখনো কাটেনি। বৃটেনের ক্ষমতাসীন সরকারের প্রভাবশালী অংশীদার নর্দান আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিকস ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি)। তারা আইরিশ ব্যাকস্টপ সিস্টেমের ঘোরবিরোধী। একইভাবে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থিরাও এই ব্যাকস্টপ ব্যবস্থার বিরোধী। পূর্বের ভোটাভুটিতে তেরেসা মে’র পরাজয়ের অন্যতম কারণ হলো এই ইস্যুতে মতভেদ। বেকস্টপ ব্যবস্থা চিরস্থায়ী হবে না- এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত ১২ই মার্চ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’ তার খসড়া চুক্তি আবারো সংসদে তোলেন। কিন্তু তা সমালোচকদের কাছে যথেষ্ট মনে হয়নি। এদিন ১৪৯ ভোটের ব্যবধানে চুক্তিটি প্রত্যাখ্যাত হয়। এখন তৃতীয় দফা ভোটের সঙ্গে শুধু বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীই না, গোটা বৃটেনের ভবিষ্যৎ জড়িয়ে আছে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের গণভোট অনুসারে এ বছরের ২৯শে মার্চের মধ্যে বৃটেনের ইইউ ত্যাগ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এক সপ্তাহের কিছুদিন বেশি সময় বাকি থাকলেও বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া এখনো অনিশ্চয়তার মুখে। নিয়ম অনুসারে, ইইউ’র সঙ্গে কোনো চুক্তি হোক বা না হোক, নির্ধারিত সময়েই বৃটেনকে ইইউ ছাড়তে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, চুক্তির মাধ্যমে বিচ্ছেদ না হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠেছে। এখন বৃটিশরা যদি চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ মেনে না নেয়, তাহলে ইইউ’র কাছে বিচ্ছেদের জন্য আরো সময় চাইবে বৃটেন।