বাড়িওয়ালার করযোগ্য আয়ের ওপর ৫০ শতাংশ হারে জরিমানার বিধান রেখে চূড়ান্ত হচ্ছে বাড়িভাড়া আইন। বাড়িওলারা ব্যাংকের মাধ্যমে বাড়াটিয়াদের কাছ থেকে বাড়িভাড়া লেনদেন না করলে বাড়িওয়ালার করযোগ্য আয়ের ওপর ৫০ শতাংশ হারে এ আইনে জরিমানা গুনতে হবে।
এতে অনেকটাই খুশি ভাড়াটিয়াদের সংগঠনগুলো। তবে এ আইনে খুশি নয় বাড়িওলারা।
কোনো বাড়ির মালিকের বাড়িভাড়া বাবদ নিট আয় ২৫ হাজার টাকা হলেই তাকে কর দিতে হবে। এমন বিধান রেখে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করার পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ বিষয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে।
জারি করা প্রজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ সালের রুল ৮-এর পর নতুন রুল ৮-(এ) সংযোজিত হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, কোনো বাড়িওয়ালার যদি তার বাসার অন্যান্য খরচ ও সার্ভিস চার্জসহ সর্বমোট মাসিক ভাড়া ২৫ হাজার টাকার অধিক হয়, তাহলে ব্যাংকের মাধ্যমে বাড়িভাড়া পরিশোধ বাধ্যতামূলক।
বাড়ির মালিকদের বাণিজ্যিক ব্যাংকে বাড়িভাড়া গ্রহণের জন্য পৃথক হিসাব পরিচালনা করতে হবে। ভাড়াটিয়া ভাড়ার টাকা প্রদানের সময় তা ব্যাংকে গিয়ে চেকের মাধ্যমে জমা দেবেন। যদি তিনি ব্যাংকে টাকা জমা দিতে না পারেন, তাহলে মানি রিসিপ্টের মাধ্যমে বাড়িওয়ালার কাছে জমা দেবেন। বাড়িওয়ালাকে অবশ্যই এক মাসের মধ্যে তা ব্যাংকে চেকের মাধ্যমে নিজের অ্যাকাউন্টে জমা দিতে হবে।
ব্যাংক হিসাবে বাড়িভাড়া জমা না হলে বা নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ না করলে বাধ্যতামূলকভাবে জরিমানা আদায় করা হবে। শুধু তা-ই নয়, ব্যবসায় আয় রয়েছে, এমন করদাতাদের ক্ষেত্রে বাড়িভাড়া ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করা না-হলে দাবিকৃত খরচ অগ্রাহ্য করা হবে।
এনবিআর বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনকে যুগোপযোগী করে সব অস্পষ্টতা দূর করে শিগগিরই বিধি চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে। যেখানে থাকবে বাড়িওয়ালা বা ভাড়াটে সিডিউলভুক্ত কোন কোন ব্যাংকের মাধ্যমে এই লেনদেন করবেন, করের হার কতটুকু হবে ইত্যাদি।
এ বিষয়ে এনবিআর সূত্রে জানা যায়, যদি ব্যাংকের মাধ্যমে বাড়িভাড়া লেনদেন না হয়, তাহলে বাড়িওয়ালার করযোগ্য আয়ের ওপর ৫০ শতাংশ হারে জরিমানা বা এককালীন ৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। তবে উভয় বিধির মধ্যে যে প্রক্রিয়ায় জরিমানা সর্বোচ্চ হবে, বাড়িওয়ালার জন্য সেটিই প্রযোজ্য হবে।
বাড়িভাড়া ব্যাংকে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতায় নানামুখী হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে প্রাপ্য প্রকৃত রাজস্ব সরকারের ঘরে আনতে এই উদ্যোগ নেওয়া হলেও এ নিয়ে শেষ পর্যন্ত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এনবিআর কঠোর হলে বাড়িভাড়া ফাঁকি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় বাড়বে। তবে রাজস্ব বোর্ডের বাড়তি এই চাপ ভাড়াটিয়াদের ঘাড়ে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
কারণ হিসেবে তারা বলছেন, কর বাবদ প্রদত্ত বাড়তি টাকা বছর শেষে বাড়িভাড়ার সঙ্গেই যুক্ত করবেন বাড়ির মালিকরা। যা বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের মধ্য নতুন করে দ্বন্দ্ব তৈরি করবে। তাই এ থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে বাড়িভাড়া ব্যাংকে দেওয়ার শর্তের পাশাপাশি বিদ্যমান বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনকে যুগোপযোগী করে তা বাস্তবায়ন করা জরুরি। তাহলে একদিকে যেমন রাজস্ব আদায় বাড়বে, অন্যদিকে অস্বাভাবিক বাড়িভাড়া থেকেও রেহাই পাবেন ভাড়াটিয়ারা।
এ বিষয়ে এনবিআর সদস্য (আয়কর নীতি) সৈয়দ আমিনুল করিম বলেন, গৃহসম্পত্তি খাত থেকে প্রকৃত আয় না দেখানোয় ব্যাংকের মাধ্যমে বাড়ি ভাড়া নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এই ব্যবস্থায় কর আদায় বাড়লে ওই চাপ ভাড়াটিয়ার ওপর পড়তে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনটি হতেই পারে।
তিনি আরো বলেন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে গৃহসম্পত্তি খাতের আয়ের কর বাবদ প্রায় ২৫০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হবে। যদি বাড়িভাড়া ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়ার নিয়ম বাস্তবায়িত হয়, এটি কয়েক গুণ বাড়তে পারে।
এনবিআরের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, “ব্যাংকের মাধ্যমে বাড়িভাড়া আদায়ের উদ্যোগটি ভালো। তবে এনবিআর কিভাবে বাড়ি ও বাড়িওয়ালা চিহ্নিত করবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আর বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে বৈরী সম্পর্ক তৈরি হবে কি না, সে বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। এটা বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে এমনিতেই বিদ্যমান।”
চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত করজাল বৃদ্ধি, কর ফাঁকি রোধ এবং বাড়িভাড়া আদায়ে স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে বাড়ির মোট ভাড়া প্রাপ্তি ২৫ হাজার টাকার বেশি হলে ব্যাংকের মাধ্যমে বাড়িভাড়া পরিশোধের প্রস্তাব দেন।